ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে এক সপ্তাহে কলেজ ছাত্রী, কিশোরী, বৃদ্ধা ও গৃহবধু সহ ৬ জন গলায় ফাঁস দিয়ে আতহত্যা করেছে। দীর্ঘ অসুস্থতা, পেট ব্যথা, মায়ের উপর অভিমান, মাদক ও পারিবারিক অশান্তির কারণে এসব অতহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টদের পরিবার থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানা সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ১১ টায় উপজেলার সেনগাও ইউনিয়নের দস্তমপুর গ্রামের শুভ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী মেঘলা (২০) গোয়াল ঘড়ের তীরের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার শ^শুর ধনেশ চন্দ্র রায় পুলিশকে জানায়, তার ছেলে মাদকাসক্ত। বৃহস্পতিবার শুভ চন্দ্র তার স্ত্রী মেঘলার কানের স্বর্ণের দুল বিক্রি করে মাদক সেবন করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বাধে। এরই জের ধরে মেঘলা আতহত্যা করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতহত্যা করে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের কিসমত সৈয়দপুর গ্রামের মৃত কুলদা রঞ্জন রায়ের ছেলে মহেশ চন্দ্র রায় (৪০)। বাড়ির পাশে আম গাছের ডালে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতহত্যা করেন তিনি। মানষিক সমস্যা ছিল তার। এর আগে তার মেঝ ভাইও আতহত্যা করেছিল।মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সেনগাও ইউনিয়নের দস্তমপুর গ্রামে বেলাল হোসেনের ছেলে জীবন আলী (২৫) নিজ শয়ন ঘড়ে তীরের সাথে মাফলার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
একই দিনে আতহত্যা করে উপজেলার নাকফুল গ্রামের মজিরুলের কন্যা রুবা আকতার (১৮)। শয়ন ঘড়ের তীরের সাথে ওরনা দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে
আত্মহত্যা করে রুবা। রুবার মামা আল মামুন পুলিশকে জানায়, তার ভাগনি শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি’র ছাত্রী। পারিবারিক কাজ কর্ম নিয়ে দুপুরে রুবাকে বকাবকি করে তার মা।
এরপর রুবার মা ও বাবা গরুর জন্য ঘাস কাটতে বাড়ির বাইরে যায়। সেই ফাকে মায়ের উপর অভিমান করে রুবা আতহত্যা করে। জীবন আলীর পিতা বেলাল হোসেন থানায় লিখিত ভাবে জানায়, তার ছেলে মাদকা সক্ত ছিল। নেশার জন্য ঐ দিন সকালে জীবন তার মায়ের কাছে টাকা চায়। না দেওয়ায় দুপুরে সে আতহত্যা করে।এদিকে গত ১২ মার্চ সন্ধায় উপজেলার ভেলাতৈড় ভদ্রপাড়া গ্রামের সবুজ আলীর কন্যা শোনিয়া আকতার (১২) ওরনা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতহত্যা করে।
একই দিন রাত ১০ টার দিকে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের রকনাল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী সাতো বালা(৭০) শয়ন ঘড়ের বারান্দায় রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আতœহত্যা করে।শোনিয়ার দাদা আব্দুল জলিল থানায় লিখিত ভাবে জানান, শোনিয়ার পিতা সিলেটে কাজ করে। মা পালিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে। দাদারবাড়িতে মানুষ হচ্ছিল শোনিয়া। ৬/৭ মাস আগ থেকে শোনিয়া পেট ব্যাথায় ভুগছিল।
এ কারণে সে আতহত্যা করে। সাতো বালার ছেলে বিনোদ চন্দ্র রায় পুলিশকে জানায়, তার মা অসুস্থ ছিল। যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আতহত্যা করে।থানার নথি পত্র অনুযায়ী জানুয়ারী মাস থেকে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় আতহত্যা করেছে ১০ জন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই ৬ জন। হঠাৎ করে আতহত্যা সংখ্যা কেন বেড়ে গেল এর কারণ খুজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন সমাজের না অসঙ্গতির কথা।সমাজ কর্মী প্রভাষক তারেক হোসেন বলেন, পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাওয়া, সামাজিক অবক্ষয় ও মানষিক সমস্যার কারণে দিন দিন অতহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এর জন্য কাউন্সিলিং দরকার।
পীরগঞ্জ উপজেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল বলেন, ইন্টারনেট আসক্তি, সামাজিক বিশৃংখলা, হতাশা ও আবেগ থেকেই এমটা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল জব্বার বলেন, মানষিক অবস্বাদ গ্রস্থরা নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে আতহত্যার পথ বেছে নেয়। তাদের বোঝাতে হবে। মনে হয় আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে। তবেই এ প্রবণতা কমানো সম্ভব।
পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে তো এমনটা ছিল না। একেক দিন উপজেলার একেক জায়গায় আতহত্যার ঘটনা ঘটছে। বুঝা যাচ্ছে না।