ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বসতবাড়ির আশে পাশে ও ফসলি জমির মাঝখানে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটা।
আর ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে নিয়ে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করা হচ্ছে। জমির উপরি ভাগের মাটি দিয়ে ইট তৈরী করে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে দূষিত করা হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে আম ও লিচু গাছের মুকুল সহ বিভিন্ন
ফসলের খেত। শ্বাস সহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে ভাটা এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে। কমছে ফসলের উৎদপাদন। এ উপজেলায় এরকম ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হাওয়া ভাটা। বাকিগুলো ফিক্স
চিমনি ভাটা। ভাটাগুলির বেশির ভাগের কোন লাইসেন্স নেই।
লাইসেন্স ছাড়াই ভাটাগুলি চলছে বছরের পর বছর ধরে। অন্যান্য বছরের
ন্যায় এবারও ঐসব ভাটায় ইট তৈরীর প্রস্তুতি চলছে। ভাটায় পোড়ানোর জন্য স্তুপ করা হয়েছে শত শত টন কাঠ খড়ি। এ মাসেই বেশ কিছু ভাটায় আগুনও দেওয়া হবে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। তবে প্রশাসন বলছেন, অবৈধ ইট ভাটা বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পীরগঞ্জ পৌর শহর ঘেঁষে চাপোড় এলাকায় পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ পাকা সড়কের দু’পাশে^ বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠের মাঝখানে ৪টি, ভেলাতৈড় ও গনিরহাটে জনবসতি এলাকায় ৩টি, কেউটগাঁওয়ে ঘনবসতি সংলগ্ন ফসলের মাঠে একটি, গোদাগাড়ি-সিন্দুর্না এলাকায় ফসলি জমিতে ৪টি, কালিয়াগঞ্জে আবাদি জমিতে একটি, মল্লিকপুরে ১টি এবং বৈরচুনায় পাকা সড়কের দু’ধারে ২টি ইট ভাটায় প্রতি মৌসুমে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি দিয়ে ইট তৈরী ও কয়লার পাশাপাশি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এতে উজার হচ্ছে বনাঞ্চল, কমছে কৃষি জমি, উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশিাপাশি দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। এবারও ভাটায় কাঠ পোড়ানোর জন্য বিভিন্ন এলাকায় শত শত টন খড়ির স্তুপ করেছেন ভাটা মালিকরা। গাছের গুড়ি ও ডালপালা ভাটায় জ¦ালানোর উপযোগী করার জন্য চাপোড় এলাকায় অবৈধ ভাবে স্থাপন করা হয়েছে একটি করাত কল।
যেখানে রাত দিন শুধু ভাটার খড়ি সাইজ করা হয়। সেখান থেকে সাইজ করা খড়ি ট্রলিতে করে বিভিন্ন এলাকায় স্তুপ করছেন ভাটা মালিকরা।জসাইপাড়া গ্রামের তারেক হোসেন জানান, পীরগঞ্জে তিন ফসলী আবাদির জমির মাঝখানে ইটভাটা করা হয়েছে। ভাটার আশ পাশের আবাদি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে নিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লা পরিবর্তে কাঠের ব্যবহার এখন মামলি ব্যাপার। এটাতে কারো নহর নেই। এর ফলে জমি কমছে, মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া জমিতে কমপক্ষে ৭/৮ বছর ভাল ফসল হচ্ছে না।
ভেলাতৈড় গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, তাদের এলাকায় ভাটার ধুয়া, আগুনের ফুলকি আর ধুলা বালিতে গ্রামের অনেকের শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ইট পোড়ানোর মৌসুমে এ রোগের হার বেড়ে যায়। এতে এলাকার মানুষ দীর্ঘ মেয়াদি ভোগান্তিতে পড়ছে।ভাটা বন্ধে তারা অনেকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
কিন্তু কোন কাজ হয়নি।নারায়নপুর গ্রামের মোঃ বাদল জানান, ভাটার কালো ধুয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। আশপাশের আম, লিচু বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাওয়া ভাটার গরম বাতাশে ধান সহ অন্যান্য ফসল ঝলসে যাচ্ছে। কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না এবং ইট তৈরীর ক্ষেত্রে আবাদি জমির উপরি ভাগের মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে কাঠ কিংবা বাঁশ পোড়ানো যাবে না।
আবাদি জমির উপরি ভাগের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরী করলে প্রথমবার দু’বছরের কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমান এবং এর পরবর্তীতে আবার ব্যবহার করলে দুই থেকে দশ বছরের জেল সেই সাথে দুই থেকে দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে অনধিক তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।কিন্তু উপজেলায় কোন ভাবেই এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না।
স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, শুল্ক বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করেই ইটভাটার এ অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালানো হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভাটা মালিক। তারা বলছেন, প্রশাসন সহ সব শ্রেণীকেই হাত করে ইট ভাটা চালাচ্ছেন তারা।
এর জন্য বছরে তাদের ভাটা প্রতি আড়াই লাখ টাকা করে বাড়তি খরচ করতে হয়। উপজেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব জানান, পীরগঞ্জ উপজেলা মুলত কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে সব জমিতেই কম বেশি আবাদ হয়। উন্নয়ন কাজের জন্য ইট দরকার। এজন্য তুলনা মুলক কম আবাদ হয় এমন জমিতে ভাটা করা হয়েছে।
সবাই কাঠ পোড়ান এটা ঠিক না আর আবাদি জমির উপরি ভাগের মাটি সংশ্লিষ্ট জমি মালিকের সম্মতিতেই কাটা হয়।বরাবরের মত এবারও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মতে অবৈধ ইট ভাটা বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।