পুঁজিবাজারে এখনও স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। তবে দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু শেয়ারের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। এছাড়া কয়েকটি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দৌড়াচ্ছে খুবই দ্রত গতিতে। আর এসব শেয়ারের পেছনে কারসাজি চক্র সক্রিয় থাকতে পারে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে সার্বিক অর্থনীতিতে। স্বাভাবিকভাবেই বাদ যায়নি পুঁজিবাজারও। কয়েক মাস আগের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো, তবে এখনও অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা মিলছে না।
আবার বিপরীত চিত্রও আছে। কিছু দুর্বল মৌলভিত্তির ছোট মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হয় এমারেল্ড অয়েল। ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ স্টক ও ১০ শতাংশ নগদ, ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক এবং ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয় কোম্পানিটি। এরপর শুরু হয় নানা কেলেঙ্কারি।
উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কোম্পানির নামে বিপুল অংকের ব্যাংকঋণ আাত্মসাত করে দেশত্যাগ করেন। বন্ধ হয় কোম্পানিটি। পরে ২০২১ সালে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক মিনরি বাংলাদেশ লিমিটেড মনোনীত তিনজনকে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ৯ জানুয়ারি ২০২২ পুনরায় উৎপাদনে যায় এমারেল্ড অয়েল। এমারেল্ড অয়েল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “আগের ম্যানেজমেন্টের নামে শেয়ারগুলো ওইভাবেই আছে। বাকি শেয়ার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে আছে।”
পুঞ্জিভূত লোকসান আর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে গত ৪ জুন ২ শতাংশ মুনাফা ঘোষণা করে কোম্পানিটি। এর মাত্র চার দিনের মাথায় ৮ জুন ঘোষণা আসে ৫ শতাংশ ইন্টিরিম ডিভিডেন্ডের। আফজাল হোসেন বলেন,শেয়ারহোল্ডাররা যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কোনো মুনাফা পায়নি, কোনো এজিএম হয়নি। তাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা ছিল কিছু একটা যেন তারা পায়।” এদিকে গত ১১ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩২ টাকা ৭০ পয়সা। দুই মাসেরও কম সময়ে ৮ জুন সেই শেয়ারের দাম ৩১৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩৬ টাকা ১০ পয়সা। কারা বাড়াচ্ছে দাম? বিশেষজ্ঞারা বলছেন, ঋণগ্রস্ত একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম এতটা বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, “তাদের রিসিভিবল, তাদের অন্যান্য অ্যাসেট, ইনভেনটোরি, মেশিনারীর কন্ডিশন - সবকিছুই নেগেটিভ লেখা আছে। তারপরও ১২২ টাকায় যাওয়া মানে এখানে সম্পূর্ণভাবে একটা কারসাজি চক্র জড়িত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি।” এদিকে গেল দুই মাসে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৫২.৬৩ শতাংশ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৮৩,০৭ শতাংশ, জুট স্পিনার্স ৬৭.৯৩ শতাংশ, এপেক্স ফুডস ৫২.০২ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫৫.৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এসব শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি দেখছেন বাজারদর বিশ্লেষকরা।
সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, “সারা বাজারের যদি চিত্র দেখি, একটা গ্রুপ কিছু আইটেমকে সিলেক্ট করেছে, লো-পেইডআপ শেয়ারকে বিশেষ করে তারা ফোকাস করছে। তারা ফ্লোরে বড় শেয়ারগুলো রেখে দিয়ে লো-পেইডআপ শেয়ারগুলো নিয়ে মুভমেন্ট করছে।” কারসাজি বন্ধে স্টক এক্সচেঞ্জ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ঝুঁকিতে পড়বে।
এসকেডি/অননিউজ