পেটের মধ্যে কাঁচি, দেড় বছর যাবত কিশোরীর যন্ত্রণা ভোগ

অনলাইন ডেস্ক।।

অপারেশনের সময় রোগীর পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই কাজ সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। গত দেড় বছর আগে মনিরা খাতুন (১৭) নামের ওই কিশোরীর অপারেশন করেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক।

পেটের ব্যথা না কমায় সম্প্রতি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তাকে এক্সরে করার কথা বলেন চিকিৎসক। এক্সরে করার পর চিকিৎসকরা পেটের ভেতরে একটি কাঁচি দেখতে পান। দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে কাঁচি নিয়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছেন মনিরা। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মহলে তোলপাড় শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটি গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে মনিরা। তৎকালীন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ তলপেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন মনিরা। সিস্ট অপারেশনের জন্য হাসপাতালের নারী সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ৯ মার্চ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তার অপারেশন করা হয়।

জানা গেছে, এ সার্জিক্যাল অপারেশনের পরেও মনিরার পেটের ব্যথা থেকে যায়। অপারেশনের কয়েকদিন পর মনিরার বিয়ে দেওয়া হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কল্যাণপট্টি গ্রামে। ব্যথানাশক ওষুধ ও পল্লী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে চলছিল তার চিকিৎসা।

এরপর মনিরা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর বাচ্চা নষ্ট হলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এরপরেও বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তার পেট ব্যথা কমেনি। গত দুইদিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে তাকে মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্সরের মাধ্যমে চিকিৎসকরা দেখতে পান, মনিরার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি আছে।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, আমাদের সন্দেহ হলে তাকে একটি এক্সরে করতে বলি। পরে এক্সরে রিপোর্ট আসার পর কাঁচি দেখতে পাওয়া যায়। কয়েকজন চিকিৎসক বলছেন, গত বছরের ৩ মার্চ একটি অপারেশনের সময় ভুলে তার পেটের ভেতরে এ কাঁচিটি রেখে দেয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই কাঁচির হাতলে সামান্য মরচে পড়ে গেছে এবং ওই কিশোরীর পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এটি। দ্রুত অপারেশন করে কাঁচিটি বের করা না হলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে জানান তারা।

তবে আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় এই অপারেশনে দেরি হবে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। বিষয়টির সঠিক তদন্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার মোহাম্মাদ আসাদ উল্লাহ সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে ঘটনাটি এই হাসপাতালে ঘটেছে কিনা। যদি রোগীর কাছে কোনো ডকুমেন্ট থাকে, তাহলে সেই কাগজপত্রসহ একটি আবেদন প্রশাসনিক ভবনে দিলে, হাসপাতাল প্রশাসন সার্জারি বিভাগের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইবে। তবে ওই তরুণীর পরিবার এখনো তাদের হাসপাতালে যোগাযোগ করেনি বলে জানানো হয়েছে।

সূত্র অনলাইন।।

আরো দেখুনঃ