মাত্র সাত শতক জমির লোভে ভাতিজাদের ফাঁসাতে বাবা খুন করলেন তার নিজের ১৪ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েকে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম.তানভীর আহমেদ এ কথা বলেন। এমন ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলায়।
গত ২ অক্টোবর কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুরে মাদ্রাসা ছাত্রী সালমা আক্তার (১৪) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সালমা ওই গ্রামের মোঃ সোলেমান ব্যপারীর ছোট মেয়ে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.তানভীর জানান, বছর খানেক আগে চান্দিনার বসন্তপুর গ্রামের সোলামান মিয়ার সাথে সাত শতক জমি নিয়ে তার ভাতিজা শাহ আলম এবং শাহ কামালের সাথে দ্বন্দ শুরু হয়। পরে এ নিয়ে একাধিকবার শালিশি বৈঠক হয়। পরে মামলা উভয় পক্ষে মামলা করেন। পরে ওই সাত শতক জমির লোভে ভাতিজাদের হত্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে আপন মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করে সোলেমান। এ নিয়ে তার ভাই লোকমান হোসেন, আবদুল বাতেন , প্রতিবেশী আবুল হোসেন, আবদুর রহমান, সফিউল্লাহ ও খলিলের সাথে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার আগের দিন সোলেমান তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। পরে রাতে বাবা ও চাচারা মিলে প্রথমে শ্বাসরোধ করে সালমাকে হত্যা করে। পরে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়ার আগে মরদেহটিকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। পরে পূর্ব পরিকল্পনামতে সোলেমান বাদী হয়ে এ ঘটনায় তার ভাতিজাদের আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্ত অবস্থায় পুলিশ খলিল এবং আবদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলে সোলেমান পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য রাতের আঁধারে নিজের গলা ও শরীরে রক্তাক্ত জখম করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোলেমান জানায় তার মেয়ের মত হত্যা করতে তার উপর হামলা চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.তানভীর আহমেদ আরও বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তদন্ত শুরু হয়। তদন্তকালে ঘটনার দিন বাদী, সাক্ষী ও আসামীদের অবস্থান এবং বাদীর এজাহারের বক্তব্যের সাথে তথ্যের গড়মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও বাদীর মানোনীত সাক্ষীদের কথাবার্তা ও ঘটনার রাতে তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরস্পর বিরােধী বক্তব্য প্রদান ও তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় গড়মিল পরিলক্ষিত হলে বাদীর প্রতিবেশী আঃ রহমান ও মোঃ খলিলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা সালমা হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। পরে গ্রেফতার আসামী আবদুর ও মোঃ খলিল বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরে বিচারক তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে।
এ বিষেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সোলেমান ব্যপারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে সহ অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজল হোসেন, চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান, ডিআইওয়ান মনির আহমেদসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ২৪।।