প্রত্যয়ন পত্রের নামে অর্থ আদায়

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ১০নং নান্দিনা কামালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রত্যয়ন পত্র নিতে ছাত্র ছাত্রী দের কাছথেকে অর্থ আদায় করছেন প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ রবেকা সুলতানা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা।

নান্দিনা কামালিয়া প্রাথমিক বিদ্যায়লে ২০২১ সালে পিএসসি পরীক্ষায় ২৫ জন ছাত্র ছাত্রী পাশ করেন তাদের প্রত্যয়নপত্র উত্তোলন করতে গেলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে অর্থ আদায় করেন। এছাড়াও এই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও খুঁটিনাটি বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সরকারি ভাবে দেওয়া স্কুলের কাজের জন্য দুটি ল্যাপটপ প্রধান শিক্ষিকা তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করেন তবে একটি ল্যাপটপ তার কাছে দেখাতে পারলেও বাকি আর একটি ল্যাপটপ কোথায় আছে সেটি দেখাতে পারেননি। ওই ল্যাপটপটি বিক্রি করে ফেলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সেটি আমার বাড়িতে রয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের সময় দরপত্র আহ্বান না করে বিদ্যালয়ের পুরাতন চেয়ার টেবিল বিক্রয়, ভেঙ্গে ফেলা দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনের রড,দরজা, চারটি টয়লেটের ইট, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের থেকে ফেরত নেওয়া পুরাতন বইগুলো বিক্রি ও নতুন ভবন তৈরীর সময় সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কিছু গাছ বিক্রি এসবের টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি প্রধান শিক্ষিকা।

ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষিকা রবেকা সুলতানা প্রতিবেদককে বলেন, কোন ছাত্র-ছাত্রী কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিচ্ছি না তারা খুশিমতো দিচ্ছে তবে, স্কুলের চেয়ার-টেবিল, ইট, রড, পুরাতন বই, দরজা, এগুলো কোথায় কিভাবে বিক্রি হয়েছে এ বিষয়ে আমি কোন কিছুই জানিনা। এসব কিছুর দায়িত্ব আমি দপ্তরী কাম প্রহরী কে দেছিলাম তিনি এগুলোর কিছুই আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। তবে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি বলেও জানিয়েছেন। তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে জানিয়ে প্রত্যায়নপত্রের টাকা তুলছেন বলে জানান।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষিকা এ সময় বলেন, খাতা বিক্রির কিছু টাকা আমি এক শিক্ষক এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চাঁদা হিসেবে দিয়েছি। তবে বই ও দরজা সম্ভবত দপ্তরী কাম প্রহরী রোকনুজ্জামান বিক্রি করেছেন বলে আমি কিছুটা জানতে পেরেছি। স্কুলের সকল জিনিসপত্রের দেখভালের দায়িত্ব দপ্তরী কাম প্রহরীর কিন্তু আমার অফিস রুম সহ কয়েকটি রুমের ৭ টি বৈদ্যুতিক বাল্ব তিনি থাকতে কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে তিনি তার হিসাব দিতে পারেনি। প্রত্যয়ন পত্রের টাকাটা যে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে নেয়া হয়েছে সেটার হিসাব দপ্তরী কাম প্রহরী রোকনুজ্জামান এর কাছে তিনি এখনো আমাকে সেই হিসাব দেননি।

বেশ কয়েকজন অভিভাবক ইয়াসিন সরকার, আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া সহ অনেকে জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে এমনিতেই আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে তবে শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত অবস্থায় পড়েছি। এই বিষয়গুলোর সমাধান না হলে এই স্কুলের পড়াশোনার মান অনেকটাই কমে যাবে। বিশেষ করে টাকা-পয়সার বিষয়টা নিয়ে অনেক অভিভাবকই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, এই বিষয়গুলো আমি মানুষের মুখে একটু একটু করে শুনেছি। এই কষ্ট কোথায় রাখিব, আজ শিক্ষকরাই দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কি শিখবে এদের থেকে। সরকার সবাইকে বিনামূল্যে বই সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সেখানে তারা কেন টাকা নিবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে এলাকার সকল কেই রুখে দাঁড়াতে হবে।

এসব বিষয় নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ হাসেম ও সাবেক সভাপতি মো: আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, যে অভিযোগগুলো আমরা শুনতে পারছি এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা কোনদিন আমাদেরকে জানায়নি। আমরা যদি এই বিষয়গুলো আগে জানতে পারতাম তাহলে অবশ্যই এর ব্যবস্থা নিতাম। আর প্রত্যায়নপত্রের টাকা উঠানোর ব্যাপারে যেটা বলা হয়েছে আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানিনা আমাদের না জানিয়ে এই কাজগুলো করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কামারখন্দ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহা জানান, প্রত্যায়ন পত্র দেওয়ার সময় কোন ছাত্র ছাত্রীর কাছ থেকে টাকা পয়সা নেওয়া যাবেনা এটা আগে থেকে বলে দেওয়া রয়েছে। তবে এই বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি তিনি টাকা-পয়সা নিয়ে থাকেন তাহলে আমরা এর ব্যবস্থা নিব। স্কুলের সার্বিক বিষয় গুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন লিখিত কোনো অভিযোগ না দিলে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব না এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই এর কঠিন শাস্তি হবে।

আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।

আরো দেখুনঃ