বান্দরবানে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়িসহ নানা ধরণের হস্তশিল্প তৈরির ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। কলাগাছের সুতা দিয়ে আরও একটি উন্নত মানের কলাবতী শাড়ি তৈরি হচ্ছে। শাড়িটি কাজও প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। কালাঘাটার পিস হস্তশিল্প কেন্দ্রে বুননশিল্পীরা এখন এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বুনন শিল্পরা। বুনন শেষ হলে শাড়িটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইং সাইং উ মারমা।
উন্নত মানের কলাবতী শাড়ি তৈরি আগে পরীক্ষামূলক প্রথম কলাবতী শাড়ি বুনন করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলক প্রথম কলাবতী শাড়ি বুননশিল্পী হিসেবে ছিলেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী। ওই সময়ে কলাবতী শাড়িটি মসৃণ ছিল না। তিনি এবার উন্নতমানের শাড়ি বুননে আসতে পারেননি। তার পরিবর্তে প্রশিক্ষক হিসেবে উন্নতমানের কলাবতী শাড়ি বুননে এসেছেন মৌলভীবাজারের কবিতা দেবী। কারিগর হিসেবে কাজ করছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দত্ত সিংহ।
এদিকে বান্দরবান জেলা শহরের কালাঘাটায় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের কার্যালয়। সেখানে কলাগাছের তন্তু দিয়ে সুতা তৈরি কাজ চলছে। পাহাড়ি ও বাঙালী নারীরা কাজ করছেন। কোমর তাঁতের মাধ্যমে কলাবতী শাড়ি বুননের কাজ চলবে। এবারের শাড়িটি সিল্ক ও কলাগাছের তন্তুর সুতার সংমিশ্রণে কলাবতী শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে আরও মসৃণ হবে বলে জানিয়েছেন কারিগর দত্ত সিংহ।
পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ মারমা বলেন, এবারের কলাবতী শাড়ি আগের চাইতে আরও উন্নতমানের হবে। তাই তিনি নিজেও কাজ করছেন। এই কলাবতী শাড়ি তৈরির পেছনে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি হলেন প্রধান উদ্যোক্তা। তার উৎসাহ ও সহযোগিতায় কলাবতী শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এই কলাবতী শাড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া হবে।
কলাগাছের সুতায় কলাবতী শাড়ি তৈরির আগে থলে, ঝুড়ি, হাতের ব্যাগ,কানের দুল, পর্দা, পুঁতির মালা, নেকলেসহ, অফিসের কাজের ফোল্ডার, থামি (পাহাড়ি নারীদের পরনের কাপড়), পাপোষসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি হয়েছিল। কলাগাছের সুতায় তৈরি পরিবেশ বান্ধব। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জেলার সাত উপজেলার প্রত্যন্ত নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারাই কলাগাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে। সেই পণ্য বিক্রি করে স্থানীয়ভাবে তারাও লাভবান হচ্ছে।
কলাবতী শাড়ির নতুন প্রশিক্ষক কবিতা দেবী বলেন, উন্নতমানের কলাবতী শাড়ি বুননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। কতদিন লাগবে সঠিক জানা নেই। কলাবতী শাড়ি আরও উন্নতমানের ও মসৃণ করে তুলতে প্রয়োজন উন্নতমানের স্পিনিং মেশিন (সুতা কাটার যন্ত্র)। কলাগাছের তন্তুকে মণ্ডে পরিণত করে স্পিনিং মেশিনে সূক্ষ্ম ও মসৃণ সুতা পাওয়া যাবে। সেই সুতায় উন্নতমানের কাপড় বানানো সম্ভব।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই কাজের শুরুটা করা হয়েছে। বিশ্বের দরবারে এই কাজকে পৌঁছে দিতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, বান্দরবানে নারীদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে কলাগাছ থেকে আশ তৈরি ও পরবর্তীতে সেই আশ থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প ও সৌখিন বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরির জন্য জেলা প্রশাসন একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় এই পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় ৪শ নারীদের কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে তাদের ভাতা প্রদান করা হয়। তবে নারীদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতেই প্রথমতেই জেলা সদরে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে উপজেলাতে এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এফআর/অননিউজ