‘প্রবাসীরা উপকৃত হতে পারে সেই ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক এগিয়ে নিতে চাই’
অনলাইন ডেস্ক।।
কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি বেকার যুবকদের সহায়তা প্রদান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে প্রত্যাগমনের পর কর্মসংস্থানের সহায়তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও ব্যয়-সাশ্রয়ী পন্থায় সহজে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রবাসীদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি নিয়ে নিজের স্বপ্ন, উচ্ছ্বাসা এবং আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান। তিনি আশা করেন খুব শিগগিরই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যায় কার্যক্রম শুরু করবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে?
ব্যাংকটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে বিগত ৩০ জুলাই ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তফসিলি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ইতোমধ্যে সিবিএস বাস্তবায়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, ভোল্ট নির্মাণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শাখা সম্প্রসারণ, জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অচিরেই ব্যাংকটি অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যায় ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে।
আপনার সামনে চ্যালেঞ্জ কী?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১৮ সালে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভূক্ত হলেও প্রতিষ্ঠাপর অর্থ্যাৎ ২০১১ সাল থেকে নন ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (এনবিএফআই) হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ফলে বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএসিএইচ, বিইএফটিএন, আরটিজিএস এর সদস্য হওয়া এবং বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স সংগ্রহে বৈদেশিক মূদ্রায় Nostro Account খোলার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি শাখায় ভোল্ট নির্মাণ, সেবায় ডিজিটালাইজেশন আনয়ন এবং জনগনের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে অভিবাসী প্রবণ উপজেলা পর্যায়ে শাখা সম্প্রসারণ ইত্যাদি কাজ রয়েছে।
আপনি ব্যাংকটিকে কিভাবে দেখছেন?
আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, বাংলাদেশের স্বাধীতার অব্যবহিত পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ও বিদেশে প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রবাসী কল্যাণ পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারী কার্যাবলী এবং উদ্যোগকে সম্প্রসারণ করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার লালিত ধারণা এবং আবেগে উৎসাহিত হয়ে অভিবাসীদের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নামে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থ্যাৎ ব্যাংকটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ‘ব্রেন চাইল্ড’ প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকটি কর্মপরিধি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন-২০১০ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দেশে অবস্থানরত তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েরাও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সেবা গ্রহীতা। অর্থ্যাৎ ব্যাংকটির কর্মপরিধি ও সম্ভাব্য সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ব্যাপক। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যে ম্যানডেট নিয়ে মহান জাতীয় সংসদের আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের অন্যতম ব্যাংক হিসেবে পরিগণিত হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কী অটোমেশনে যাচ্ছে এবং কেন?
অটোমেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিবিএস বাস্তবায়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, শাখা কানেকটিভিটি ইত্যাদি ইতোমধ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে সিবিএস লাইভে যাচ্ছে। এছাড়াও সিবিএস চালু হওয়ার সাথে অ্যাপস ভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ও পরিচালিত হবে। এসকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হলে শাখা পর্যায়ে গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন ও নতুন নতুন ঋণ পলিসি গ্রহণ করা সহজ হবে।
ব্যাংকটিকে আপনি কোথায় দেখতে চান?
ব্যাংকটিকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে দর্শন, সেটিকে বাস্তবে রূপান্তর করে সেই পর্যায় নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। প্রবাসী ভাইবোনদের নিকট এই ব্যাংকটিকে ব্যাংকিং কার্যক্রমে আস্থার প্রতীক হিসেবে এগিয়ে নেওয়া, একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে সকল সেবা-সুবিধা জনগণ ভোগ করতে পারে সেরকম ভাবেই যেন প্রবাসী ভাই-বোনেরা এই ব্যাংকটির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে সেই ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে নিতে চাই।
ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিকল্পনা কী?
আপনি নিশ্চয় জানেন, একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই সেই প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি। তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সামনের দিয়ে এগিয়ে যায়। এজন্য প্রয়োজন যুগোপযুগী প্রশিক্ষণ এবং কর্ম উদ্দীপনায় প্রেষণা। অত্র ব্যাংকের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠাকল্পে পর্যাপ্ত জনবল প্রদান করা হবে। ফলে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ও সেবার মান উন্নয়ন ঘটবে। এছাড়াও সকল স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইতোমধ্যে গৃহনির্মাণ ঋণ, মোটরসাইকেল ঋণ, কম্পিউটার ঋণ, শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ইত্যাদি যে সকল সুযোগ সুবিধা চালু আছে, সেটি অন্যান্য ব্যাংকের আদলে যুগোপযুগী করা হবে।
দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে আপনি ও আপনার ব্যাংক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারবে?
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থ দেশের আর্থসামাজিক বিকাশে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা নিয়ে আলোচনাটা তাই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে একদিকে যেমন প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে, তাদের পাঠানো অর্থ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। করোনা মহামারী পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতিকে যে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে, তা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও রেমিট্যান্সের অবদান রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১ লক্ষ শ্রমিককে বিদেশে কর্মসংস্থানে সহায়তা করেছে। ফলে অত্র ব্যাংক একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে তেমনি দেশের সামষ্টিক বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে আপনার কি ধরণের উদ্যোগ রয়েছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বীয় উদ্যোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের কল্যাণের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। প্রবাসীদের এবং পুরো জাতির জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এখন আশা এবং প্রত্যাশার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সেবা প্রদানের জন্য এই ব্যাংকটি নিবেদিত থাকবে। বিদেশে যাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য অনেকে সম্পত্তি ঘরবাড়ি বিক্রি বা বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এই প্রবাসগামী ভাইবোনদের কম খরচে দ্রত সময়ে বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করছে সেটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি গ্রাহকের দোড়গোড়ায় প্রেরিত রেমিট্যেন্স পৌছে দিতে কাজ করে যাবে।
ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এর ক্ষেত্রে আপনার কি উদ্যোগ রয়েছে?
আর্থিক অর্ন্তভূক্তিমূলক সেবা সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার উন্নতির অন্যতম উপায়। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ড প্রবর্তন ও নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে। এগুলোর মধ্যে আছে, ১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকায় খোলা ব্যাংক হিসাব, স্কুল ব্যাংকিং হিসাব, পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু/কিশোরদের ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষকের হিসাব, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ হিসাব, ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতাদের হিসাবসহ উপরে বর্ণিত অন্য হিসাবগুলো সহজে খোলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ইতোমধ্যে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা চালু করেছে। অচিরেই অন্যান্য সেবা সমূহ চালু করা হবে।
সরকারি অন্যান্য ব্যাংকের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কতদূর অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মূলত প্রবাসগামী কর্মী ও প্রবাসফেরত অভিবাসীদের নিয়ে ব্যাংকিং করছে। দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকগুলো তেমনি নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রুপ রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দেশের কৃষি ও কৃষক সম্প্রদায় উন্নয়নে কাজ করে, কর্মসংস্থান ব্যাংক দেশের বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে দেশের প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী ভাইবোনদের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে বলা যায় সরকারি অন্যান্য ব্যাংকের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর অর্জন অবশ্যম্ভাবী।
রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকের কি ধরণের ভূমিকা থাকতে পারে?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশব্যাপী রেমিটেন্স বিতরণের কাজ শুরু করেছে। Western Union, Money Gram, Xpress Money, Trans fast Remittance LLC, Ria Money Transfer সহ মোট ১৮ টি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন দেশ হতে প্রেরিত রেমিটেন্স ২.৫০% নগদ প্রণোদনাসহ ব্যাংকের সকল শাখার মাধ্যমে স্পটক্যাশ রেমিটেন্স নগদ বিতরণ করা হচ্ছে। আগামীতে রেমিট্যেন্স সংগ্রহে বৈদেশিক মূদ্রায় Nostro Account খোলা হবে। তখন ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী রেমিট্যান্স বিতরণ করা হবে।