ফেনী ও সোনাগাজীতে পৃথক দুটি ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন ও আংশিক মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার দায় স্বীকার করে নিজেদেরকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে তিন যুবক। দুটি ঘটনায় পুলিশ জেলার বিভিন্নস্থান থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন (৪০), ফেনী সদর উপজেলার চাড়িপুর বড় বাড়ির আলী আহম্মদ মিন্টু মিয়ার ছেলে মো. মহি উদ্দিন (২৪), মাথিয়ারা গ্রামের সফিকুর রহমানের ছেলে মনির হোসেন (৩৫), সোনাগাজী উপজেলার পালগিরি গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে জামশেদ আলম (২৬) এবং সমপুর গ্রামের সাইফুল হকের ছেলে আবু সুফিয়ান খোকন (৪৫)।
পুলিশ জানায়, ডাকাতির ঘটনাস্থলে রেখে যাওয়া চিরকুটের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করা হয়। সোনাগাজী উপজেলার পালগিরি গ্রামের জামশেদ আলম। সে পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। এক প্রতিবেশীর সাথে জমির বিরোধের জেরে আড়াই বছর পূর্বে তাকে একটি প্রভাবশালী চক্র একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। পুলিশি চাপে পড়ে সে ওই ডাকাতি মামলায় তার আপন শ্যালক ও বিরোধী প্রতিবেশী সহ কয়েকজনের নামে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পুলিশ তার দেয়া তথ্যমতে মাইক্রোবাস চালক শ্যালককেও গ্রেফতার করে। কিন্তু বিরোধী প্রতিবেশীকে গ্রেফতার করেনি। তার শ্যালক জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফিরলে কয়েকদিন পর পুলিশ ফের আরেকটি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। প্রায় দেড় বছর কারাগারে থাকার পর সে জামিনে মুক্তি পায়। সে এখন এলাকায় মাইক্রোবাস চালানো ছেড়ে দিয়ে চট্রগ্রামের একটি কোম্পানীতে কাভার্ডভ্যান চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন। জামশেদের দাবি গত কয়েক বছর পূর্বে সে সোনাগাজী পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ডের তাকিয়া রোডস্থ বলি বাড়ির হারুনুর রশিদের কন্যাকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তিন বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে তার।
পারিবারিক কলহের জেরে নিজের স্ত্রীকে মারধর করত জামশেদ। এক পর্যায়ে তৎকালীণ সময়ে তার পাঁচ মাস বয়সী পুত্র সন্তানকে সহ তার স্ত্রীকে শ্বশুর এবং শ্যালক তাদের বাড়িতে আটকে রাখে। সে স্ত্রী সন্তানকে আনতে গেলে শ্যালক তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীর রোশানলে পড়ে তাকে প্রভাবশালীরা তাকে একটি ডাকাতি মামলা কারাগারে দিলে সে শত্রুতা উদ্ধার করতে শ্যালক ও সে প্রতিবেশী সহ কয়েকজন লোককে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। ওই মামলায় গত ৭জানুয়ারি সে কারাগার থেকে মুক্তি পায়। স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের বাড়িতে আনতে ব্যর্থ হয়ে জেলে পরিচয় হওয়া ডাকাতদের সাথে হাত মেলান জামশেদ। কয়েকদিন পর জানতে পারেন স্ত্রী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। অবশ্যই আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ৫মে আদালতে হাজীর হওয়ার জন্য জামশেদের প্রতি সমন জারি করেন। এদিকে ৮মার্চ ফেনী সদর উপজেলার রুপসানা আক্তার নামে এক নারীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি নাম ও মুঠোফোন নাম্বার সহ তিনটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ।
চিরকুটে জামশেদের শ্বশুর, শ্যালক এবং বগাদানা ইউনিয়নের আউরারখিল গ্রামের বল্লা বাড়ির জনৈক সোহাগের নাম ও মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল। চিরকুটের নাম্বার অনুসারে জামশেদের শ্যালক ও শ্বশুরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পুলিশকে জামাই জামশেদ সন্দেহ করে পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ তাকে আটক করে ফের ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তার দখল হওয়া চার শতক জমি উদ্ধার এবং স্ত্রী সন্তানকে ফেরৎ পাওয়ার শর্তে ডাকাতির ঘটনা জড়িত থাকা এবং শ্বুশুর-শ্যালকের নাম লেখে চিরকুট লেখার কথা স্বীকার করেন। ডাকাতি করে তিন হাজার টাকা ভাগে পেয়েছেন বলে পুলিশকে তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্য মতে প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ অপরাপর ডাকাতদের গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত ডাকাত মনির হোসেন শনিবার বিকালে ফেনীর জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমাতুজ জোহরা মুনার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। লুন্ঠিত মালামালের মধ্যে একজোড়া কানের, নগদ দুই হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে একই ডাকাত দলের সদস্যরা গত ২৬মার্চ উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের পূর্ব চরসাভিকারী গ্রামের আমিনুল হকের বাড়িতে কারামতিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শিমুল ইলেকট্রনিক্সের মালিক নুরনবী শিমুলের দরজার ছিটাকানি ভেঙ্গে ডাকাতি করেন।
এসময় পরিবারের সদস্যদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে আলমারি ভেঙে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিন্মি করে নগদ ১লাখ ৫০হাজার টাকা, সাত ভরি স্বর্ন এবং ৬টি মোবাইল ফোন লুটে নেয়। ওই ঘটনায় একজোড়া কানের দুল, ভাগে পড়া নগদ ১৮হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। একই আদালতে শনিবার বিকালে মহি উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন নামে দু'ডাকাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। উল্লেখ্য; গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘ দিন কারাভোগের পর গত তিন মার্চ জামিনে মুক্তি পান।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ দাইয়্যান ও ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com