ফেনীতে বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি ও বিদ্যুৎহীন রয়েছে। ১৯ আগস্ট থেকে ফেনী জেলার ছয় উপজেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রয়েছে।
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে ভারতীয় পানি ঢুকে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম। এখনও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ছয়টি উপজেলা ও দাগনভূঞা উপজেলার একাংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্য খামার, পোল্ট্রি খামার, বিভিন্ন কারখানা, খাদ্যগুদাম, আড়ৎ ও ডেইরি খামার নিমজ্জিত রয়েছ। পানির নীচে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও বাস-বাড়িতে আটকে পড়া লোকদের খাবার শেষ হয়ে গেছে। অধিকাংশ হাট-বাজার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্তঞ্চলের মানুষগুলো চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন। রান্না করাতো দূরের কথা শুকনা খাবারও পাচ্ছেননা অনেকেই।
জানা গেছে, বন্যার পানিতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকেই জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে এ তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ পুরোপুরি সংযোগ বন্ধ করা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আনিছুল হক সোহাগ বলেন, বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে ঠিকভাবে উদ্ধার কাজও করতে পারছেন না অনেকে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ফজলুর রহমান বলেন, জেলায় চার লাখ গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যার পানি কমার আগে সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছ। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিভিন্ন রাজনলদিক দলের নেতাকর্মী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের শত শত স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হচ্ছেনা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাজ করছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন বন্যায় আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধারকৃতদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলন সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন। চরমভোগান্তিতে পড়েছেন খাদ্য সহায়তাকারী ও উদ্ধার কারীরা। পানিতে আটকে পড়াদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে।
নতুন নতুন এলাকায় পানি বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষদের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কেউবা ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে কেউবা ছুটছেন স্বজনদের বাড়িতে। নিরুপায় হয়ে শনিবার দুপুরে সোনাগাজীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুটি অংশ কেটে দিয়েছেন স্থানীয় জনতা।সড়কগুলো ডুবে থাকায় ত্রাণ সহায়তার জন্য এগিয়ে আসা ট্রাক, পিকআপ ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা অধিকাংশ নষ্ট হয়ে সড়কে আটকা পড়েছে। পেট্টোলপাম্প গুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
ডিজেল চালিত পাওয়ার ট্রলিই কিছু কিছু এলাকার এক মাত্র যাতাওয়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন ভারতীয় পানির আগ্রাসন এভাবে চলতে থাকলে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকা লোকদেরও বাঁচানো অসম্ভব হতে পারে। মতিগঞ্জের দেলোয়ার হোসেন বলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে হলেও খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২০হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আটকে পড়া লোক।