পেনশন নীতিমালা সংস্কার করছে ফ্রান্স সরকার। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলছে তীব্র বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু এত বিক্ষোভ কেন? মাক্রোঁ সরকার কি খুব কম সুবিধা দিতে চাইছে চাকরিজীবীদের?
দ্য অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অর্থাৎ ওইসিডির ৩৮টি সদস্য দেশের চেয়ে কিন্তু ফ্রান্স সরকারের পরিকল্পিত পেনশন নীতিমালাকে খুব বাস্তবতাবর্জিত বলা যাবে না।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমনানুয়েল মাক্রোঁ অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করতে চাইছেন। ইউরোপের অনেক দেশেই অবসরের বয়স ৬৪’র চেয়ে বেশি। ২০২৪ সাল থেকে জার্মানিতে অবসরের বয়স ক্রমান্বয়ে বেড়ে ৬৭ বছর হবে। জার্মানির মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশেই যেখানে অবসরের বয়স ৬৭, সেখানে অবসরের বয়স ৬৪ করতে চাওয়ায় ফ্রান্সে এত বিক্ষোভ কেন?
জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট ‘পেনশন মানচিত্র’ দিয়ে বিভিন্ন দেশের পেনশন স্কিমের তুলনা তুলে ধরেছে। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক উলরিশ বেকার মনে করেন পেনশন নীতিমালা বিষয়টা এত জটিল যে এক দেশের পেনশনের সঙ্গে আরেক দেশের তুলনা সবসময় যথার্থ হয় না, পেনশনের তুলনা করা খুব কঠিন, কারণ, বিষয়টি জটিল এবং একেক দেশে একেক রকম। তারপরও এখন তুলনাটা এসে যাচ্ছে। তার মতে, ফ্রান্সে বিক্ষোভ হচ্ছে বলেই অন্য দেশের সঙ্গে ফ্রান্সের পেনশন নীতিমালার তুলনাটা এখন বেশি করে হচ্ছে।
ফ্রান্সে বিক্ষোভ শুরুর মূল কারণ সবচেয়ে আগে অবসর নেয়ার ন্যূনতম বয়সটা সরকার বাড়াতে চাইছে। এতদিন সব মিলিয়ে সাড়ে ৪১ বছর কাজ করলেই অবসর নেওয়া যেতো। কিন্তু সংস্কার পরিকল্পনা কার্যকর হলে অন্তত ৪৩ বছর কাজ করলে প্রাপ্য পেনশনের পুরোটা পাওয়া যাবে। তার চেয়ে কম করলে কিছু টাকা কাটা যাবে।
জার্মানিতে অবসরের বয়স ৬৭ হলেও কেউ সব মিলিয়ে ৪৫ বছর কাজ করলে এবং তখন তার বয়স ৬৩ বছর হলেই তিনি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাসহ অবসর নিতে পারেন। তখন একটা টাকাও কাটে না সরকার।
সংস্কারের পরও জার্মানির (৪৫) তুলনায় দুই বছর কম কাজ করে ফ্রান্সের মানুষ যাবতীয় সুবিধাসহ অবসর নিতে পারবেন, তেমনি নিজের জমানো টাকার বিপরীতে বেশি টাকাও পাবেন তারা। ওইসিডির অন্য সদস্য দেশগুলোর চেয়ে ১৪ শতাংশ টাকা বেশি পাবেন তারা। জার্মানির চাকরিজীবীরা এক হিসেবে আয়কর কাটার পর অবশিষ্ট বেতনের ৫২.৯ ভাগ পেনশন পান। তাতে যে টাকা আসে তার চেয়ে অন্তত ৫৪০ ইউরো বেশি পান ফরাসিরা।
তবে সরকারের পরিকল্পনা কার্যকর হলে ফরাসিদের সেই টাকাটা কমবে। কারণ, সরকার অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি ন্যূনতম যত বছর সবেতন কাজ করলে পেনশন পাওয়া যায়, সেই বয়সটাও বাড়াচ্ছে। এর ফলে বেশি ক্ষতি হবে কম বেতনের কর্মচারীদের।
এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেয়ার জন্য অবশ্য ন্যূনতম পেনশনের অঙ্কটা বাড়াচ্ছে ফরাসি সরকার। এতদিন সেই অঙ্কটা ছিল ৯৬১.০৮ ইউরো, আগামীতে সেটা বেড়ে হবে ১২০০ ইউরো।
এতদিন ফ্রান্সের পুরুষরা গড়ে ৬০.৪ বছর এবং নারীরা ৬০.৯ বছর বয়সে অবসর নিতেন। সেই হিসেবে ওইসিডির বেশির ভাগ দেশের তুলনায় পুরুষরা প্রায় সাড়ে তিন বছর এবং মেয়েরা দেড় বছর কম কাজ করে অবসরে যেতেন। পেনশন নীতিমালা সংস্কারের ফলে কর্মীরা এর চেয়ে বেশিদিন কাজ করে অবসর নেবেন বলে ফ্রান্সের অনেক ওয়েজ আর্নারই এখন খুশি।
ফ্রান্সে পেনশনের জন্য সরকারকে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হয়। ভর্তুকির হার ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ওপরের দিকে।
ফরহাদ/অননিউজ