রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউপি নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ভাই ও বিদ্রোহী প্রার্থী ছামছুল আলমকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। আধাঘন্টা শ্যামপুর-বদরগঞ্জ রাস্তা অবরোধ করেন।
সোমবার (২২ শে নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর বাজারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আজিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায় -শ্যামপুর তথা ১১ গোপালপুর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষকরে প্রার্থী না বদলালে নৌকার ভরাডুবির আশংকা করছেন তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা!
জানা যায়-বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ -সভাপতি আজিজুর রহমান জনগনের রায়ে জননন্দিত চেয়ারম্যান হিসেবে চার চার বার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অত্র এলাকায় আওয়ামী পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার। জনপ্রিয় ও দক্ষ চেয়ারম্যানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গোল্ড মেডেলও অর্জন করেছেন আজিজুর রহমান।
গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি পরিবারের সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী সামছুল আলমকে হারিয়ে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান।
অথচ চলতি ইউপি নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এবার মনোনয়ন না দেয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া থাকলেও কি কারনে, কিভাবে, কাদের মদদে মোঃ সামছুল আলমকে (গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী) নৌকার মনোনয়ন দেয়া হলো তা নিয়ে এখন চলছে নানানজনের নানান বিশ্লেষণ।
রংপুর জেলা আওয়ামীলীগ, বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীরাও খুজে পাচ্ছেননা আজিজুর রহমানকে মনোনয়ন না দেয়ার কি কারন।
তাই তৃণমূল আওয়ামীলীগের অনেকেই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডে থাকা দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তথা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করে সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনার জোর দাবী জানিয়েছেন।
গোপালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা, শ্যামপুর সুগার মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সেক্রেটারি ও আওয়ামী শ্রমিকলীগ নেতা আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের জানান, এ সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা উচিত! তিনি অভিযোগ করে বলেন, বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের জনাব শামসুল আলম যাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার ভাই বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সহিদার হাজী এবং তিনি বিগত নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেছিল। যারা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে তারা আবার নৌকার মনোনয়ন কিভাবে পায়!
বিষয়টি খুবই দুঃখজনক!যারা জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলাই শেখেনি তারা কি না নৌকার মাঝি হতে চায়? ১১ নং ইউনিয়ন বাসিরা এটা মেনে নিবে না। ইতোমধ্যে তারা উক্ত প্রার্থী কে প্রত্যাক্ষান করেছে। যারা আওয়ামীলীগ করে তাদের মধ্যে থেকে প্রার্থী দিতে হবে। আওয়ামী লীগ কোন ব্যাবসার জায়গা নয়, এটা গন মানুষের আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা।
আওয়ালী লীগ মনোনয়ন বোর্ড এর নিকট পুনঃ বিবেচনার জন্য এ শ্রমিক নেতা অনুরোধও জানিয়েছেন। গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু তালেব একবুক কষ্ট নিয়ে বলেন, যে আওয়ামীলীগের জন্য আমরা দিন-রাত কাজ করি, যে নৌকাকে আমরা স্বয়নে, স্বপনে লালন করি, ধারন করি সেই আওয়ামীলীগ বিএনপি পরিবারে নৌকা প্রতিক দিতে পারেনা!
নিশ্চই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উপরমহলকে ভুল বুঝিয়ে বর্তমান জননন্দিত চেয়ারম্যান ও বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আজিজুর রহমানকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। যা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মানতে পারছেনা। তিনি বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে স্থানীয় এমপি মহোদয়সহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামীগের কাছে আবেদন জানান।
বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও গোপালপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, বিগত ৭ বার নির্বাচন করে ৪ বার অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
অবদি তার বিরুদ্ধে কোন দূর্ণীতি বা স্বজন প্রীতির কোন অভিযোগ কেউ দিতে পারেনি। জন্মলগ্ন থেকেই তার আওয়ামী পরিবার। আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে তারা সর্বদা রাজপথে সামনের সারিতে থেকে সবকিছু মোকাবেলা করেছে, মার খেয়েছে, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন এবং আওয়ামীলীগের জন্য রক্ত ঝরিয়েছি।
যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি জীবনে করেন নাই বরং নৎসাত করতে শ্যামপুর অঞ্চলে কাজ করেছেন তাদের সাথে কখনো আপস করেননি কিন্তু তারাই যদি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পায়, তাহলে আমরা কার কাছে যাব, কাকে বলবো এ না পাওয়ার বেদনার কথা!
তাই আওয়ামীলীগ তথা ইউনিয়নবাসিকে বিএনপি নেতার ভাইকে হটাৎ নৌকার মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি মারাত্নক ব্যাথিত করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আজিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে আরোও জানান, যদি সঠিকভাবে যাছাই করা হয় তাহলে সবদিক থেকে আমিই নৌকার যোগ্য মাঝি। আশাকরি মনোনয়ন বোর্ড বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনঃবিবেচনা করবেন। আবারো বিপুলভোটে নির্বাচিত হয়ে দলের মান রক্ষা করবো।
তিনি বলেন -তার বড় ছেলে রাফিউর রহমান কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে জামাত-শিবিরকে বিতাড়িত করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য একাধিকবার বিএনপি, জামাত-শিবির কর্তৃক হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন তার পরেও জীবনবাজি রেখে এখনো দলের জন্য রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, একজন সৈনিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট ছেলে সাফিউর রহমান রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করছেন।
আর আমদেরকে যদি মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয় তাহলে নিশ্চই কোন কারন আছে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। কাদের স্বার্থে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলোনা তা মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপসহ তদন্তদাবী করছেন। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহবান জানাচ্ছেন।
এদিকে এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানাযায় এবং গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, গোপালপুর ইউনিয়নে সামছুল আলম নামে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি আসলে জামাত-বিএনপির একজন এজেন্ট ও এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী মাত্র।
তিনি বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম সহিদার হাজীর ছোট ভাই। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির সমর্থনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ঘোড়া মার্কা নিয়ে অংশ নিয়ে আজিজুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
বর্তমানে সামছুল আলমের ভাতিজা সহিরুল আলম বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ছোট ভাই মরহুম ইমদাদুল হক ছিলেন ১১নং গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অপর ভাতিজা ইউনুছ আলী এখনো বিএনপির সক্রিয় সদস্য। এছাড়াও জনি নামে এক নাতী বদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল নেতা ও মিনু মাস্টার নামে এক ভাগ্নে জামায়াতের রোকন সদস্য। এত কিছুর পরেও কিভাবে তিনি মনোনয়ন পেলেন?
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24