এবার পুলিশের বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের সঙ্গে ডিএমপির অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনের বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে প্রচার চলছে তা গুজব বলে জানিয়েছেন সানজিদার বড় বোন হোসনে আরা কামনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, হারুনের সঙ্গে সানজিদার বিয়ে হয়নি। এই অপপ্রচারে তাদের পরিবার বিব্রত।
গত ২০১৭ সালের ১০ মার্চ গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে সানজিদা আফরিন নিপার বিয়ে হয়। সানজিদা দীর্ঘদিন তার স্বামীর বাড়ি গাজীপুরে এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে সানজিদা ঢাকায় বদলি হন। সম্প্রতি বারডেম হাসপাতালের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয় হারুনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সানজিদার। পরে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়।
এ বিষয়ে সানজিদার বোন বলেন, তাদের মধ্যে বিয়ে হয়নি। যেহেতু বিয়ে হয়নি, তাই ছাড়াছাড়িরও প্রশ্ন নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, সানজিদার বিয়ে হয়েছে আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুনই সানজিদার স্বামী। এডিসি হারুন তার কলিগমাত্র। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সানজিদা আফরিন। তার বাবা মো. হোসেন আলী বার্ধক্যজনিত কারণে গত বছর মারা যান।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পরবর্তী সময়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাতবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হোসেন আলী দীর্ঘদিন গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এর আগে হারুনের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন সানজিদাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, একটি ছবি ছড়িয়ে দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশিদের সঙ্গে তার বিয়ের কল্পকাহিনী প্রচার করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সাংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সানজিদা আফরিন বলেন, যে কেউ ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবে- ওই ছবির নারী আমি নই। এর আগে অনেক ইস্যুতে অনেকেই বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এবার আমি এর শিকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, হারুন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তিনি শুধুমাত্র আমার কলিগ। তিনি আমাকে ডাক্তারের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এছাড়া হাসপাতালে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুরো বিষয় বেরিয়ে আসবে। এদিকে বারডেম হাসপাতালের ঘটনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বর্ণনাও দিয়েছেন সানজিদা আফরিন। সানজিদা বলেন, আমার স্বামীসহ আরও কয়েকজন প্রথমে এডিসি হারুন স্যারকে মারধর করেন।
সানজিদার দাবি, অনেকদিন ধরে আমার কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। আমি স্যারকে কল দিয়েছিলাম আমার জন্য একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য। স্যার ওসি শাহবাগ এবং ওসি রমনা থানাকে দিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার সময় একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেন। পরে আমি ডাক্তার দেখাতে যাই। ৬টার সময় হাসপাতালে যাওয়ার পর জানতে পারি যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছে সেই চিকিৎসক মিটিংয়ে আছেন। এ অবস্থায় আমি আবারও স্যারকে কল দিয়ে জানাই ওই চিকিৎসক হয়তো আমাকে দেখবেন না। তখন স্যার বলেন ‘তুমি অপেক্ষা করো আমি দেখি এসে কথা বলে কাউকে ম্যানেজ করা যায় কি না।’ এরপর উনি হাসপাতালে আসেন। উনি আসার পর হাসপাতালে কথা বলেন। এতে একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ হয়।
সানজিদা আরও বলেন, ‘‘ডাক্তার আমাকে কিছু টেস্ট দেন। আমি সেগুলোর জন্য স্যাম্পল দিচ্ছি। যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমি ইটিটি রুমে ছিলাম। ইটিটি রুম থেকে আমি প্রথম যে শব্দ শুনতে পাই, স্যার খুব জোরে বলছেন যে, ‘ভাই আপনি আমার গায়ে কেন হাত দিচ্ছেন। আপনিতো আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না’।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল যে, অন্য কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে বা এরকম কিছু। পরে আমি আমার হাজব্যান্ডের গলার আওয়াজও শুনতে পাই। তখন আমার হাজব্যান্ডসহ কয়েকজন ছেলে যাদেরকে আমি চিনতাম না তারা স্যারকে মেরে টেনেহিঁচড়ে রুমের ভেতরে নিয়ে আসেন।’
সানজিদার ভাষ্য, ওই সময় আমার হাজব্যান্ড খুব উত্তেজিত ছিলেন। আমি জানি না যে কি হয়েছিল। আমার হাজব্যান্ড সঙ্গের ছেলেদেরকে বললেন, পুরো জিনিসটা ভিডিও করার জন্য। আমি তখন ইটিটি রুমে ছিলাম। আমার সারা শরীরে বিভিন্ন মেশিন লাগানো ছিল। আমি নিজেও টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালের দেয়া কাপড় পরা ছিলাম। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম, ‘রুমের ভেতরে আপনি বাইরের লোকজন নিয়ে কেন আসছেন। ওদেরকে চলে যেতে বলেন। আর আপনি কেন ভিডিও করছেন’।
এ সময় তার স্বামী মামুন তাকেও মারধর করেছেন অভিযোগ তুলে সানজিদা বলেন, ‘‘আমি যখন ভিডিও না করার জন্য চিৎকার করে বলছিলাম, তখন আমার হাজব্যান্ড আমার গায়েও হাত তুলেন। এ সময় তারা স্যারকেও মারধর করেন। তখন আমি তাদের কাছ থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে নিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে, ‘আপনারা এই অবস্থায় ভিডিও করতে পারেন না।’ তখন ছেলেগুলো ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। এরমধ্যে রুমে হাসপাতালের সিকিউরিটিরা চলে আসে। আর কিছুক্ষণ পর, প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর থানার ফোর্স এসে তাদেরকে নিয়ে যায়।’’
সূত্র : বিডি টুয়েন্টিফোর রিপোর্ট ডট কম
এফআর/অননিউজ