রাজশাহী-৪, (বাগমারা) আসনে বিএনপির প্রার্থী ডি.এম জিয়াউর রহমান জিয়ার সমর্থক সাঁইধারা গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবারসহ ১৫ টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থানায় একটি মামলা হয়েছে। সাঁইধারা গ্রামের ভুক্তভোগী সুশীল চন্দ্র প্রামানিক বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় নরদাশ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী বাচ্চু, ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার, মফিজ উদ্দিন, লেকেন আলী, মোশারফ আলী, আকতার হোসেন, আজিজুর রহমান, ইসাহাক আলী, আজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, কামরুল হাসান, পিন্টু, সাইদুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, আমির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও আজাদ মাষ্টার সহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে এবং সরজমিনে সাইধারা গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন মিলে একটি কমিটি গঠন করে বাগমারার নরদাশ ইউনিয়নের যশো বিলে প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছিলেন। ওই কমিটির সদস্য সাঁইধারা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার গ্রামের কৃষকদের জন্য দশ লক্ষ টাকা প্রকল্প থেকে নেন। কিন্তু ওই গ্রামের যে সব কৃষক বিএনপির প্রার্থী ডি.এম জিয়াউর রহমান জিয়ার পক্ষে রয়েছেন তাদের টাকা না দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছিল।
এ কারণে রোববার রাত ৮ টার দিকে গ্রামের কয়েকজন কৃষক তাদের পাওনা টাকার দাবিতে আব্দুল জব্বারের বাড়িতে যান। এই ঘটনার জেরে নরদাশ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী বাচ্চু ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার সহ ৩০-৩৫ জন ব্যক্তি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাত ১০ টার দিকে সুশীল চন্দ্র প্রামানিক, শ্যামল কুমার, আব্দুল মান্নান, দুলাল হোসেন, মোস্তাক, মামনুর রশিদ, আকবর আলী, নওশাদ আলী, আব্দুস সামাদ, আলা উদ্দিন, আজগর আলী, মানিকুল্যা, আব্দুল আজিদ, আশরাফুল ইসলাম ও আহসান আলীর বাড়িতে হামলা চালায়।

হামলাকারিরা একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত এক প্রার্থীর অনুসারী বলে মামলার বাদি সুশীল চন্দ্র প্রামানিক এবং ভুক্তভোগী মোস্তাক আহম্মেদ, আব্দুল মান্নান, সাজ্জাদ হোসেন, দুলাল হোসেন ও মজনু রহমানসহ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। হামলাকারিরা বিএনপির প্রার্থী ডি.এম জিয়ার সমর্থকদের ১৫টি বাড়ির দরজা-জানালা ও বৈদ্যুতিক মিটার ভাঙচুর, লুটপাট ও কয়েকটি বাড়ির টিনের চালায় অগ্নিসংযোগ করে। হামলার শিকার হওয়া মুরগী ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন দুলু অভিযোগ করেন, তিনি একজন গরীব মানুষ। মুরগীর ব্যবসা করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রামের মাঝখানে বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি ঘরে তিনি বসবাস করতেন।
কিন্তু ডি.এম জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর কারণে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত এক প্রার্থীর অনুসারী তার সেই বেড়ার ঘরটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। ওই ঘরে তার মুরগী বিক্রয়ের ৭০ হাজার টাকা ছিল। হামলাকারিরা সেই টাকাও নিয়ে গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মামলার বাদি সুশীল চন্দ্র প্রামানিকের স্ত্রী অনিতা রানী জানান, ঘটনার রাতে তিনি তার দুই সন্তান নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিলেন। এ সময় একদল দূর্বূত্ত অতর্কিতভাবে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করতে থাকে।
এ সময় তিনি ঘর থেকে বাইরে এসে দেখতে পান তাদের বাড়ির বারান্দার টিনের চালায় দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে। এ সময় কয়েকজন লোক তার ঘরে প্রবেশ করে নগদ দেড় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে হামলার শিকার হওয়া ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নানের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন জানান, হামলাকারিরা তাদের বাড়ির দরজা-জানালা ও একটি বৈদ্যুতিক মিটার ভেঙ্গে ফেলেছে এবং রান্না ঘরের টিনের চালা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ডি.এম জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর কারণে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেছেন, বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে সুশীল চন্দ্র প্রামানিক বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com