কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকা থেকে অপহরণের চারদিন পর শুক্রবার দুপুরে এক স্কুলছাত্রীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত রোববার দিন-দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নেয় একটি কিশোর গ্যাং ও বখাটে চক্র। বর্তমানে থানা পুলিশের সহযোগিতায় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। ফলে ওই এলাকার ছাত্রীদের অভিভাবকরা আতংক ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
কুমিল্লার আদালতে দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকালে আন্দিকুট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল ওই স্কুলছাত্রী। গাঙ্গেরকুট টাওয়ারের নিকট পৌছামাত্র পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা জাড্ডা গ্রামের প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে বখাটে সিফাত মিয়ার নেতৃত্বে ৭/৮ জনের একটি কিশোর গ্যাং ওই স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক মাইক্রোতে তুলে নেয়। ওই স্কুলছাত্রী জাঙ্গাল বাদশা মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা দিতে গেলে অপহরণের ঘটনা উল্লেখ না করে স্কুলছাত্রী নিখোঁজের জিডি করায় পুলিশ। ঘটনার ৩দিন অতিবাহিত হলেও ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি ভিকটিম পরিবার। বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ভিকটিমকে উদ্ধারপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাঙ্গরা বাজার থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ পেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করার জন্য তৎপরতা চালায়। শুক্রবার দুপুরে এসআই মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকার বায়েরবাগ এলাকার বখাটে সিফাত মিয়ার ফুফুর বাসা ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এ সময় উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটে সিফাত মিয়াকে আটক করলেও রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টির ব্যাপারে জাঙ্গাল বাদশা মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি আবু সায়েম বলেন, প্রভাবশালীরা ঘটনাটি ধামাচাপার সংবাদে আমরা ছাাত্রীদের নিয়ে চরম ভাবে উদ্ধিগ্ন। এ ধরণের কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের আইনের আওতায় না আনলে ভবিষ্যতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরে স্কুলছাত্রীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করি। ভিক্টিমের সাথে সিফাত মিয়া নামের এক যুবককে পেলেও ওসি স্যারের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কুমিল্লা জজ কোর্টের এপিপি এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, ‘স্কুলছাত্রীকে অপহরণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনা স্থানীয় ভাবে আপোষ করার আইনগত কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ আপোষ করার চেষ্টা করে আদালতের নির্দেশে তাকেও আইনের আওতায় আনা যাবে।’
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমরা ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ভিকটিমকে আদালতে পাঠাব। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে পেলেও ধরার কোন সুযোগ নেই। আদালত আমাকে গ্রেফতারের নির্দেশ না দেওয়ায় সিফাত মিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’