বাড়িতে লাগানো হয়েছে নানান জাতের ফল, ফুল, ঔষধি ও সবজির গাছ। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে যেন এক কৃষি খামার। মুরাদনগর উপজেলার বলিঘর গ্রামের কৃতিসন্তান গোলাম কিবরিয়া সরকার তার বাড়ির আঙ্গিনায় গড়েছেন এমন সবুজ বাগান।
তিনি একাধারে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাণুরাগী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক। চট্টগ্রামে রয়েছে তার বিশাল ব্যবসা। ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে আসেন। প্রকৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও প্রজেক্ট মিলিয়ে লাগিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার গাছ। এরমধ্যে আছে সবজি, ফল, ফুল, ঔষধি ও কাঠ।
ইট পাথরের শহর থেকে বেরিয়ে এসে গায়ের আকাঁ বাঁকা মেট্রোপথের সবুজ ছাঁয়া অনুভব করছিলেন গোলাম কিবরিয়া সরকার । ব্যবসা ও রাজনীতির পাশ-াপাশি প্রকৃতির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা থেকে ১শ শতক বাড়ির চারপাশে লাগিয়েছেন প্রায় ৪০ প্রজাতির গাছ।
যেখানে আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচু, মাল্টা, লেবু, সজিনা, কামরাঙ্গা, আমড়া, পেঁপে, বড়ই, পেয়ারা, বিলম্বি, আঙুর , অলবরি, চালতা, জাম্বুরা, বেল, বিলাতি গাব। মরিচ, লাউ,করলা, কুমড়া, ভেন্ডি, বেগুন, হরতকি, অ্যালোভেরা, গোলাপ ফুল, গাঁধাফুল, জবা ফুলসহ নানা জাতের গাছ। এছাড়া শীতের মৌসুমে সিম, কপি ও বাঁধাকপি চাষ করে থাকেন।
স্থানীয় বিশিষ্টজনদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা দেখেছি তিনি পরিবেশের প্রতি যতœশীল। নীজ বাড়ি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ এবং রাস্তার পাশে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন। শুধু প্রকৃতি নয় মানুষের প্রতিও তিনি অনেক উদার। করোনাকালীন সময়ে পাঁচশত পরিবারকে দিয়েছেন ১ মাসের খাবার। এছাড়াও যেকোন বিপদ আপদে মানুষ তাকে কাছে পায়।
শিক্ষায় রয়েছে তার বিশাল অবদান। মুরাদনগর উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন বলিঘর হুজুরি শাহ উচ্চ বিদ্যালয়, পাক বলিঘর দাখিল মাদ্রাসা, ব্যরিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও তিনি সহ প্রতিষ্ঠাতা ফলোয়ার ফলো স্কুল এন্ড কলেজ চট্রগ্রাম।
দাতা সদস্য বাঁশকাইট রফিকুল ইসলাম মিয়া ডিগ্রি কলেজ, সাতমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেহপুর কেজি উচ্চ বিদ্যালয়, টনকী হানিফ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়, শাহেদাগোপ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়, ফরমার ম্যানেজিং কমিটি মেম্বার কুরের পাড় আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তিনি বলিঘর কমিউনিটি ক্লিনিক এর নিঃস্বার্থ জমিদাতা। আজীবন সদস্য চট্রগ্রাম মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ। রাজনীতির মাঠে সাপলুডুর মত উত্থান পতন থাকলেও জনপ্রিয়তায় তার কোন ভাটা নেই। মুরাদনগরের মাঠে রয়েছে তার হাজার হাজার ভক্ত।
কর্মব্যাস্ত জীবন আর রাজনীতির মাঝে বাড়িতে এত সুন্দর সবুজ বনায়ন কিভাবে সম্ভব প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। জন্মভূমির প্রতি আমরা ঋণী। এদেশকে ভালো রাখতে , দেশের মানুষকে ভালো রাখতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আমি ছাত্র জীবন থেকেই গাছ লাগাই। গাছ আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
উৎপাদিত ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদেরও বিতরণ করি। আমি গত ১ বছরে কোন সবজির জন্য বাজারে যাইনি। ২২ বিঘা, ১৫ বিঘা ও ১০ বিঘা জমি কেটে তিনটি মাছের প্রজেক্ট করেছি। মাছগুলো স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বেড়ে উঠে। এখানেও কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি তাদের সুপার ভিশন করি।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিবরিয়া সরকার বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল ও সবজি গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ এক বাড়ি সাজিয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। কেউ যদি ওনার মতো বাড়ির চারপাশে পড়ে থাকা পরিত্যাক্ত জমিতে সবজির চাষ করতে চায় তাহলে আমাদের লোক তাদের বাড়িতে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবে।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24