নীলফামারী প্রতিনিধি।।
বিআরটিএ অফিসে সেবা প্রদানে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, সেবা প্রতাশিদের হয়রানি করে নিজ বিকাশ একাউন্টে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগে বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৫ জনের মোবাইল ও বিকাশ একাউন্ট জব্দ করে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা জানায়, নিয়ম থাকলেও মটর সাইকেল মালিকদের কাছে রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র জমা না নিয়ে শো-রুম কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দেয়া হচ্ছে মটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন কাগজ।
নীলফামারী বিআরটিএ অফিসে ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় দুদকের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালানো পরে বেরিয়ে এসেছে আরোও চাঞ্চলকর তথ্য।
সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, মটরযান পরিদর্শক হিমাদ্রী ঘটক, অফিস সহকারী নারায়ন গোস্বামী, অফিস সহায়ক মাছুমা আক্তার, এনরোলমেন্ট অফিসার শাহিন আলম, মারুফ হোসেন, রেজাউল ইসলাম মিলে গড়ে তুলেছেন একটি দালাল চক্র। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিধারিত দালালদের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে ড্রাইভিং এর জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরী ও ড্রাইভিং পরীক্ষা কেন্দ্রে বাইরের লোক দিয়ে নিদিষ্ট পরীক্ষার্থীকে সকল ধরনের সুযোগ করে দেওয়াসহ কন্ট্রাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন এই দালাল চক্রটি, যা ওপেন সিক্রেট।
ভুক্তভোগি সাকিল আহমেদ জানান, অফিস সহায়ক মাছুমা দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে নীলফামারী বিআরটিএতে অফিস সহায়ক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এ কারণে নিজের আত্মীয়-স্বজন দ্বারা গড়ে তুলেছেন বিআরটিএ অফিসের পার্শ্বে শাহ্ কম্পিউটার সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে মাছুমার ইশারাতে এই কম্পিউটার সেন্টার হতে বিভিন্ন সার্টিফিকেট, মেডিকেল শারীরিক সুস্থ্যতার সার্টিফিকেট তৈরী করে দেওয়া হয় এক্ষেত্রে বিগত ৩/৪ বছরের মেডিকেল সার্টিফিকেট চেক করলে দেখা যাবে শতকরা ৮০ ভাগ সার্টিফিকেটে ডাক্তারদের জাল সনদ একই ডাক্তারের স্বাক্ষরে একাধিক শারীরিক সুস্থ্যতার সার্টিফিকেট মিলবে। এভাবে ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। মাছুমা আক্তারের স্বামী ও বিআরটিএর চাকুরী করার সুবাদে শক্তিশালী দালাল চক্র গঠন করেছে।
মোঃ সবুর হোসেন জানান, মাছুমা আক্তার, নারায়ন গোস্বামী, শাহিন আলম, মারুফ হোসেন, রেজাউল ইসলাম এদের নিযুক্ত দালালকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদ জানালে এনআরবিসি ব্যাংক এর সিকিউরিটি গার্ড, নওশাদ ইসলামকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ১০ হাজার টাকা নেয় দালাল চক্রটি। এবিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংক (বিআরটিএ) বুথ অফিসার আপন রহমান ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে তবে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার যোগাযোগ নম্বর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে স্থানীয় বিভিন্ন দালালদের খবর দিয়ে ব্যাংকের সামনে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এছাড়া বিআরটিএ অফিসের ভিতর মনঞ্জু, রিপন, সাজু ও আলী হোসেন নামের একাধিক ব্যক্তি সেবা গ্রহীতাদের হয়রানির ভয় দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করে নেয়ার কথা বলে মোটা অর্থ আদায় করে। পরে ভিতর থেকে কাগজ বের করে চক্রটির মাধ্যমে টাকা পয়সা বাটোয়ারা করে। জেলা প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দালাল চক্রের কয়েকজনকে আটক করলেও আটক হয়নি মূল হোতারা।
এ বিষয়ে বিআরটিএর উপ-পরিচালক ফারুক আলম সাংবাদিকদের বলেন, নসিবে যা আছে তাই হবে, আমরা দুর্নীতি করেছি নিউজ করলেও কিছু হবে না আমাদের।
দুদকের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ সাংবাদিকদের জানান, এখানে বেশি কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি আমরা, সকল বিষয়ে রির্পোট করা হবে। যেহেতু এটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান এ জন্য আমরা কাউকে আটক বা গ্রেফতার করিনি।
এফআর/অননিউজ