বিজয় দিবসে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রশাসন এবং নিবন্ধনকৃত অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। কুবিতে জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনের প্রচলিত রীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, আবাসিক হল ও বিভাগগুলোর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর অঙ্গসংগঠনগুলো পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার কথা থাকলেও এবার সেই নিয়ম ভেঙে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সংগঠনগুলো পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের নাম মাইকে ঘোষণা করা হবে না এবং যে যার মতো পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে হবে। এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংগঠনের সদস্যরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় সংগঠনের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্যের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “সংগঠনগুলোকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ মনে করি না।”
এ মন্তব্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সভাপতি শেখ শামিন বখস সাদী পাল্টা প্রশ্ন করেন, “স্যার, আমরা তাহলে কাদের হয়ে প্রোগ্রাম কাভার করছি?”
জবাবে উপাচার্য বলেন, “তোমরা কাদের হয়ে প্রোগ্রাম কাভার করছো, জানি না।”
একই সময় রাজনীতিমুক্ত কুবি ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রদলের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ছাত্রদল দাবি করে, তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে। শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। তাই আমরা এখানে কোনো দলীয় কার্যক্রম করতে আসিনি। শুধু পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের জন্য এসেছি। প্রক্টর স্যারের অনুমতি নিয়েই এসেছি।’
তবে এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, “তারা আমার কাছে অনুমতি চাইলে আমি অনুমতি দিয়েছিলাম। তবে তারা যে কোনো ব্যানারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে, তা আমার জানা ছিল না।”
এসময় সংগঠনগুলোর সদস্যরা বিজয় দিবসে তাদের প্রতি প্রশাসনের উপেক্ষামূলক আচরণের সঠিক ব্যাখ্যা চাইলেও উপস্থিত প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন বলে জানান তারা।
উপাচার্যের বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যার দাবিতে সংগঠনের সদস্যরা প্রায় তিন ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
পরবর্তীতে দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্য শহীদ মিনারে এসে সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একাডেমিক যে পর্যায়গুলো আছে যেমন- প্রশাসন থেকে, ১৯টি বিভাগ ও পাঁচটি হলের ফুল দেওয়ার পর বাকিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্যই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রথমবারের মতো নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত সংগঠনগুলোকে কেন জানানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বিষয়টি জানিনা।’
পরবর্তীতে সকল সংগঠনের সবাইকে নিয়ে তিনি শীঘ্রই একটি আলোচনা সভা করবেন সেই আশ্বাস দেন।