বিদুতের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা এবং উৎপাদন খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) সংসদে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ পাসের সময় বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্য ও অভিযোগের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য তুলে ধরেন।
নসরুল হামিদ বলেন, অনেকে ভুল, মিথ্যা, অবাস্তব ও মনগড়া কথা বলেছেন। বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। বিদ্যুতের প্ল্যান্টে উৎপাদন হয় জ্বালানি দিয়ে। এই জ্বালানির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদন খরচ ভিন্ন হয়। তিনি (সংসদ সদস্য) বললেন, চার টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হয়। আবার বললেন ৩০ টাকা উৎপাদন খরচ হয়। এর সঙ্গে জ্বালানির ভিন্নতা আছে। একটি ফুয়েলের ওপর নির্ভর করে থাকলে আমরা বিশাল বিপদে পড়তাম।
তিনি বলেন, কিছু অংশ গ্যাস, তেল, হাইড্রো, সোলার, কয়লা এবং ভারত থেকে ও পাশের দেশ থেকে কিছুটা বিদ্যুৎ আনা। আমরা বিভিন্নভাবে ফুয়েল ফিক্সড করেছি। এতে আমাদের রিস্ক কমে গেছে। জাইকার সহযোগিতায় ২০১০ সালে এই মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। কেন আমরা তেলভিত্তিক প্ল্যান্ট রাখলাম, তা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট শর্ট টার্মের জন্য।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় দুপুরে এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে রাতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। দিন ও সন্ধ্যার মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৪০ গুণ। এই ৪০ গুণকে কাভার করতে হয় তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়ে। এসব পাওয়ার প্ল্যান্ট এক ঘণ্টার মধ্যে চালু করা যায়। আর কয়লা, গ্যাস, হাইড্রোভিত্তিক প্ল্যান্টগুলো চালু করতে ৪৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
তিনি বলেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট একবার বন্ধ হলে লাগবে সাত দিন। এগুলো আমাদের ব্যালেন্স করতে হয়, সারা বিশ্বেই করা হয়। এসব বিষয় যদি না জানেন, মানুষের কথা শুনে উল্টাপাল্টা বললে তো বিভ্রান্ত করা হয়। যদি আমরা ডিজেল দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্ট চালাই, তাহলে খরচ পড়বে ৩০ টাকা। কারণ ডিজেলের দামের ওপর নির্ভর করবে। দাম যদি কমে যায় কম হবে। এখন যেহেতু বেশি দাম, বেশি খরচ, তাই বেশি দাম পড়ে।
তিনি আরও বলেন, ডিজেল তো আমরা সবসময় চালু করি না, বিশেষ সময় যখন প্রয়োজন হয়। কয়লা যেখানে পাঁচ টাকা ছিল, বিশ্বে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ১৫ টাকা। এই তারতম্য মার্কেটে এই তারতম্যকে ব্যালেন্স করতে হয়। গড়ে বিদ্যুতের খরচ হলো প্রায় ৮ থেকে ৯ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবার বাসায় বিদ্যুৎ দিতে হবে। সে গরিব হোক, বড়লোক হোক, যেই হোক। গ্রামে এই যে তিন টাকা করে বিল দিচ্ছেন তারা, বাকি যে উৎপাদন খরচের সঙ্গে পার্থক্য, তা প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকি দিচ্ছেন। তারা এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজেদের স্বাবলম্বী করবে। এটাকে আমরা ভর্তুকি বলি না। সরকার গরিব মানুষের জন্য বিনিয়োগ করছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে ৭ ডলার থেকে ৬৭ ডলার, এখন আবার নেমে এসেছে ২৩ ডলারে। যদি ৬৭ ডলারে গ্যাস কিনে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট চালাতাম, তবে এক লাখ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত খরচ লাগতো। তাই আমরা কিছুটা লোডশেডিং করেছি। আবার আমরা বেরিয়ে আসছি। এই ব্যবস্থাপনা আমরা করছি অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে।
রেন্টাল প্ল্যান্টের কথা টেনে নসরুল হামিদ বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কথা অনেকে প্রায়ই বলেন। রেন্টাল পাওয়ার নেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে শর্ট টার্মের জন্য। এখন রেন্টাল পাওয়ার বলতে কিছু নেই। এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন।
ফের ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে। তেল বিদেশ থেকে আনতে হয়। যে তেলের দাম ছিল ৭৯ ডলার, সেই তেলের দাম হয়েছে ১৪০ ডলার। সরকারকে অতিরিক্তভাবে এই খরচ করতে হয়েছে। আমরা যদি সেই সময় দাম বাড়াতাম তাহলে ডিজেলের দাম হতো ১৪০ টাকা। আমরা সহনীয় পর্যায়ে রেখেছি, ধীরে ধীরে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। শেষের দিকে এসে সমন্বয় করেছি।