দিনাজপুরের বিরামপুরে অভিযান পরিচালনা করে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া এক কিশোরীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় বর রুবেল ইসলাম (২২) কে ২হাজার টাকা জরিমানা ও বাল্যবিবাহ পড়ানোর দায়ে কাজী রেহান রেজা (৪৭) কে ৬মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় কনের বাবাকে সতর্ক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। দণ্ডপ্রাপ্ত কাজী রেহান রেজা উপজেলার চেংমারী গ্রামের হুমায়ন রেজার ছেলে। তিনি উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কাজি হিসেবে কাজ করছিলেন। বর রুবেল ইসলাম নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সেকেন্দার আলীর ছেলে।
ভ্রাম্যমান আদালত সুত্রে জানা যায়,পারিবারিকভাবে দুই পরিবারের দেখাদেখি শেষে পছন্দ হওয়ায় বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন এলাকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া বৃষ্টি আক্তার (১৪)এর সাথে বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সেকেন্দার আলীর ছেলে রুবেল ইসলামের সাথে।পুর্বে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ি বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বিয়ের দিন ধার্য ছিল।
সে মোতাবেক বিয়ের সম্পুর্ন আয়োজন সম্পুর্ন করে উভয় পক্ষ।সে মোতাবেক বিয়ের পোশাক পরে বরযাত্রীসহ কনের বাড়িতে বিয়ের আসরে উপস্থিত বর রুবেল হোসেন। কনে বৃষ্টি আক্তারকে বিয়ের সাজে হাজির করা হয় প্যান্ডেলে। বিয়ে পড়াতে কাজী রেহান রেজাও উপস্থিত হয় সেই বাড়িতে বিয়ে সম্পুর্ন করতে খসড়া লেখা শেষ করেছিলেন আগেভাগেই। এদিকে চলছিল বরযাত্রীদের খাওয়া দাওয়াসহ বিয়ে পড়ানোর সমস্ত আয়োজন।
এসময় হঠাৎ করেই পুলিশসহ বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রশাসনের চোখে ধুলা দিতে বরের পাশে কনে সেজে বসে পড়েন মেয়ের ভাবি। আর প্রশাসন দেখে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন কাজী রেহান রেজা। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ে পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে কাজীকে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন এলাকায় বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে পুলিশসহ সেখানে হাজির হই। এসময় সেখানে আনুমানিক ১৪ বছর বয়সের এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। মজার বিষয় হলো যখন আমরা সেখানে হাজির হই তখন তারা আমাদেরকে দেখে মেয়ের ভাবি কনে সেজে বরের পাশে বসে ছিলেন আমাদেরকে বোকা বানানোর জন্য।
একইসাথে আমাদেরকে কাজী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় কাজিকে হাতে-নাতে ধরে বাল্যবিববাহ পড়ানোর দায়ে তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয় এবং পাত্র রুবেল ইসলামকে ২হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়, একইসাথে কনের বাবাকে সতর্ক করা হয়।সেই সাথে বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে সোচ্চার আহবান জানান তিনি।