টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছে যুক্তরাষ্ট্রে, সেটি ঘিরে কয়েক বছর ধরেই ক্রিকেট খেলাটাকে চিনতে শুরু করেছে মার্কিন মুলুক। আর এ সুযোগে মানবপাচারের উৎসব চলছে ভারতে। দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন, ক্রিকেটকে পুঁজি করে নতুন পন্থায় গুজরাট থেকে মানবপাচারের মহোৎসব চলছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, গুজরাটের মানবপাচারকারীরা ক্রিকেটকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচারের নতুন পথ বের করেছে। পথটা কী? এখানে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী হতে যাওয়া লোকদের একটাই যোগ্যতা দরকার – ক্রিকেটের মৌলিক জ্ঞান।
যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে, তাঁদের আগে স্থানীয় নামি-বেনামি ক্রিকেট একাডেমিতে খেলোয়াড় হিসেবে নথিভুক্ত করানো হয়। এরপর ওই পাচারকারীরা নিজেরাই বা কোনো ক্রিকেট আয়োজকের সঙ্গে মিলে কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, যেখানে ওই ‘ক্রিকেটারদের’ খেলানো হয় এবং এ জন্য সার্টিফিকেটেরও ব্যবস্থা থাকে।
এরপর ওইসব সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেদের ‘ক্লায়েন্ট’দের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্রিকেট ক্লাব থেকে স্পনসরশিপ জোগাড় করে আনে পাচারকারীরা, যেটি দেখিয়ে ছয় মাসের ভিসা বের করে আনে তারা। তারপর তো কাজ সহজ? বৈধভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন ওইসব ‘ক্রিকেটার’রা, এরপর অবৈধভাবে থেকে যান সেখানে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনাতে এসব লোকদের পাঠায় পাচারকারীরা। পরিকল্পনাটা হলো, তারা সেখানে যাবেন, এরপর হাওয়া হয়ে যাবেন, অবৈধভাবে বসবাস করতে থাকবেন।
এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘আগে মানুষ বলিউড বা টিভি তারকা সেজে শিল্পী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকত। একবার সেখানে ঢুকতে পারলে এরপর গায়েব হয়ে যেত, এবং থেকে যেত। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন কঠিন হয়ে যাওয়ায় পাচারকারীরা তাদের নতুন পরিকল্পনা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছে।’
পাচারকারীদের এই র্যাকেট ৪-৫ বছর আগ থেকে কাজ করে আসছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তখন গুজরাট থেকে লোকদের ক্রিকেটার সাজিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হতো, কারণ সে সময়ে রাশিয়ায় খেলাটা নিয়ে কিছু কাজ হচ্ছিল। কিন্তু গত এক-দেড় বছরে যুক্তরাষ্ট্রকেই নতুন ঠিকানা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনাকে, কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই র্যাকেট চালান অল্প কয়েকজন। তাঁরা প্রত্যেক অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীর কাছ থেকে ৪০-৪৫ লাখ রূপি করে নেন বলে জানাচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। কীভাবে তারা কাজ করে, এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া সেটির বর্ণনায় লিখেছে, ‘র্যাকেট যারা চালায়, তারা হয় নিজেরাই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বা কয়েকজন আয়োজকের সঙ্গে হাত মেলায় ওই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার জন্য। সেসব টুর্নামেন্টে ক্রিকেটারদের মতো তাদের ক্লায়েন্টরাও সার্টিফিকেট পায়, যেটা (ভিসা আবেদনের সময়ে) তাদেরকে ‘ক্রিকেটার’ হিসেবে দেখানোর ব্যবস্থা করে দেয়। পাচারকারীরা তখন ওই সার্টিফিকেট কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পনসরশিপ বাগিয়ে নেয়, তাদের ক্লায়েন্ট ক্রিকেটার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্টে খেলবে জানিয়ে ভিসার ব্যবস্থা করে।’
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24