বিশ^বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী জন্মস্থান নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো শিল্পী সুলতানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম, শিল্পীর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, শিল্পীর জীবন ও কর্মের আলোচনা সভা, পটগান, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শহরের মাছিমদিয়ায় এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় শিল্পীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টার দিকে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা, এসএম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়, এসএম সুলতান চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন, নড়াইল প্রেসক্লাব, মূর্ছনা সঙ্গীত নিকেতন, ছন্দায়ন, প্রজন্ম সুলতান সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে শিল্পী এসএম সুলতানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও
মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর শিশুস্বর্গে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় দুই শতাধিক শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে।
শিশুদের রঙতুলির আচঁড়ে এসএম সুলতান, ভাসমান শিশুস্বর্গ, শিল্পীর অঙ্কিত বিভিন্ন ছবির চিত্র, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য, জীবন ও প্রকৃতিসহ বিভিন্ন দৃশ্য ফুটে ওঠে। পরে শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর শিশুস্বর্গের হলরুমে শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক শারমিন জাহান আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জুলিয়া শুকায়না, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন বিশ^াস, এসএম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর অশোক কুমার শীল, নড়াইল
প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজেদুল ইসলাম, এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাবেক সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোঃ ইকবাল হোসেন সিকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ শরফি মুনীর হোসেন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী। এসময় নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ^ত শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এমএম আরাফাত হোসেন সহ সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুলতান ভক্তসহ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা, শিল্পী এসএম সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে স্মৃতি সংগ্রহশালার অবকাঠামো উন্নয়ন সহ পাশ^বর্তী জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অনুরোধ জানান।
আলোচনা সভা শেষে পটগান দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। পরে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, বিশ^বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসুস্থ্য অবস্থায় যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মেছের আলী ও মায়ের নাম মাজু বিবি।
শিল্পী সুলতান শ্রমজীবি ও মেহনতি মানুষের ছবি এঁকে বিশ^বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।