আওয়ামীলীগের বিদ্রোহ প্রার্থী আর বিনা ভোটে নির্বাচিত একশত চেয়ারম্যানসহ ৫৫৯ জন কিভাবে নির্বাচিত হয়ে যান? সিইসি নির্বাচনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছেন বলে দাবী করছেন। তারপরেও আওয়ামীলীগের অনেক নিবেদিত-তৃণমূলের পোড়খাওয়া নেতাকর্মী ছিলেন এবার যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। এক্ষেত্রে তারা প্রতিপক্ষের কাছে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বলে আখ্যায়িত হয়ে আসছেন।
এমন একজন বিদ্রোহী আছেন, ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এলাকায় থেকে দুর্দিনে আওয়ামীলীগের হাল ধরেছেন-ওই সমস্ত নেতাকর্মীরা আজ বিদ্রোহী। অনেকে বলেন সিলেকশন বোর্ডের কাছে আমি হয়ত অতোটা মূল্যায়িত হইনি। কিন্তু এলাকার জনগণের কাছে আমি মূল্যায়িত হয়ে ছিলাম বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কি করে হয়? যদি ওই প্রার্থী অন্য দলের হয়ে আঁতাত করে নির্বাচিত হয় তাহলেই তাকে বিদ্রোহী বলা যেতে পারে। এসব মনগড়া কথা নিয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা তৃণমূলের কর্মীদেরকে অবজ্ঞা করছেন কিংবা অবমূল্যায়ন করছেন। আর সে আলোকে এবার বুড়িচং এর পীরযাত্রাপুর ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে নমিনেটেড হতে চান-সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি (চলমান) আলহাজ্জ মোঃ আবু তাহের। আর এখানে বর্তমানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জাহের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিগত দিনে বর্তমান চেয়ারম্যান যা কিছু উন্নয়ন করেছেন, তার পুরোটাই দৃশ্যমান নয়। এখানকার যত উন্নয়ন প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরু’র দিক নির্দেশনায়। জাহের চেয়ারম্যান যা করেছেন তার সবটাই সরকারি রুটিন ওয়ার্ক, এর বাহিরে তেমন কিছু নয়, ব্যাপক অনিয়মের খবর রয়েছে এলাকাতে। দুর্নীতি আর স্বজন প্রীতির অভিযোগ বিস্তর তার বিরুদ্ধে। তিনিও আগামীতে মনোনয়ন চাইবেন। তবে ভালো অবস্থানে আছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের।
এদিকে সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপি নির্বাচন করতে যাচ্ছে স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। ব্যাপক সহিংসতা আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে দু’ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করেছে সিইসি। তৃতীয় ধাপে ৮৩৫টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৩৩৮ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার একক প্রার্থী হয়ে। চরমোনায়েমের ইসলামী ঐক্যজোটের হাত পাখায় ৬টি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আর ৫০৪ জন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি নির্বাচন হবে ২৬ ডিসেম্বর। গত ৫দিন আগে ২৫ নভেম্বর মনোয়ন জমা দেয়া হয়েছে। এতে অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য ৫ থেকে ৮ জন পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। অনেকেই বলেন নৌকার টিকেট যারা পেয়েছেন তারা অনেকেই ‘নমিনিয়েশন বাণিজ্যে’র মধ্যেই। বাছাই হবে ২৯ নভেম্বর, আপীল করা যাবে ৩০ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ৬ ডিসেম্বর।
আবু তাহের পীরযাত্রাপুরের ৩নং ওয়ার্ডের মরহুম আব্দুল মজিদের সন্তান।
বেড়ে উঠেছেন এ জনপদে। মাটি আর মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ছোট বেলা থেকেই। পড়াশোনা করেছেন স্থানীয়ভাবে- স্বশিক্ষিত। তারপরেও তিনি মার্জিত ও সমাজ সচেতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মেধা আর মননে তৎকালীন এমপি আবদুল মতিন খসরু’র নেতৃত্বে এলাকায় সৃজনশীল নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। এক সময় বুড়িচং উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন (২০১৮)। সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন তিনি তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। আর বর্তমানে ৫নং পীর যাত্রাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ১ নম্বর সদস্য।
এবার তিনি নির্বাচনে মাঠে থাকতে চাইছেন। যদি এমপি’র সুপারিশ থাকে তাহলেই তিনি মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। তিনি বলেন, আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ এলাকার কৃতিসন্তান এবং সমাজসেবক মাননীয় এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম খান। এছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। আমার অতীতের ক্যারিয়ার বিবেচনা করে সিলেকশন কমিটি এবার আমাকে দলীয়ভাবে নমিনিয়েশন দিতে সাহায্য করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি।
আর নির্বাচিত হলে এ ইউনিয়নকে অত্যাধুনিক ও ডিজিটাইলাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো তিনি বলেন, আমাদের পীরযাত্রাপুরে ব্যাপক এলাকায় ইতিমধ্যেই অনেক ব্রিজ-কালভার্ট, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা বিগত দিনে করেছি। আর সবকিছুই হয়েছে আমার এমপি আবদুল মতিন খসরুর দিক নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যেই। যদি আমি পুনরায় নির্বাচিত হতে পারি এ ধারাবাকিতা রক্ষা করার চেষ্টা করবো আগামী দিনগুলোতে।
আর সেটা হবে আমার বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাশেম খানের দিক নির্দেশনায়। আবু তাহের বলেন, আমি কোনো প্রফেশনাল চেয়ারম্যান হয়ে - টিআর-কাবিখা’র পেছনে দৌড়াতে চাই না। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ জন্য আমি গ্রামের শালিস ব্যবস্থাপকে বেগবান করার চেষ্টা করেছি।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও আবু তাহের পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজের অভিভাবক সদস্য ছিলেন। দক্ষিণ শ্যামপুর আলৗ নেওয়াজ ভূইয়া কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। এছাড়াও সাদকপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির ২০১০ থেকে আজ অবধি সাধারণ সম্পাদক। ঈদগা ও বাজার কমিটির সাথেও তিনি সম্পৃক্ত। বর্ণাঢ্য জীবনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাবেন বলে, দৃঢ় প্রত্যয় করেন।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24