ডা. আবু মুসা ভূইয়া, পীরযাত্রাপুরের ১নং ওয়ার্ডের ভোটার। বেড়ে উঠেছেন এ জনপদে। মাটি আর মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ছোট বেলা থেকেই। পড়াশোনা করেছেন স্থানীয়ভাবে বুড়িচং আনন্দ পাইলট হাই স্কুলে। এরপর শহরের ঠাকুরপাড়াস্থ প্যারা মেডিকেল থেকে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। তারপরেও তিনি মার্জিত ও সমাজ সচেতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মেধা আর মননে তৎকালীন এমপি আবদুল মতিন খসরু’র নেতৃত্বে এলাকায় সৃজনশীল নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।
ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ৭৯ পর্যন্ত অধ্যাপক ইউনুসের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী ঘরনার সকল কর্মকান্ডে বিচরণ ছিল। এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৬ সালে থানা আওয়ামীলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। আর তখন এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর সান্নিধ্যে এসে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করেন। আর তখনই তার গ্রহণযোগ্য বেড়ে যায়। ওই সময় তার এক মামা এম এ গনি’র (মোজাফফর ন্যাপ) বাম রাজনীতি করতেন। তার হাত ধরেই জনগণকে ভালোবাসতে শুরু করেন। তিনি বলেন আমার অতীতের ক্যারিয়ার বিবেচনা করে সিলেকশন কমিটি তথা আমার নেত্রী-জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার আমাকে দলীয়ভাবে নমিনিয়েশন দিতে সাহায্য করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। আর নির্বাচিত হলে এই পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নকে অত্যাধুনিক ও ডিজিটাইলাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, আমাদের পীরযাত্রাপুরে ব্যাপক এলাকায় ইতিমধ্যেই অনেক ব্রিজ-কালভার্ট, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করেছেন। আমি নির্বাচিত হলে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবো। আর সেটা হবে আমার বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাশেম খানের দিক নির্দেশনায়।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় ১৩টি প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি স্কুল থেকে ২০জন করে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী বাছাই করে তাদেরকে দুই শিফটে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেব। আর তখন ২৬০জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবো। এ বাস্তবতা দেখা গেছে দক্ষিণ শ্যামপুরে তার বাবার ৩৩ শতক জায়গার উপর স্কুল নির্মাণ আর ৩৮ শতক জায়গার উপর মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মাণ করে তিনি নন্দিত হয়ে আছেন। ৬২ বছরের ডা. আবু মুসা ভূইয়া তার এলাকায় কংশনগর ইউনিট হসপিটাল নির্মাণ করে স্বাস্থ্য সেবায় অবদান রেখেছেন। তার একপুত্র আবদুলাহ আল জুবায়ের শাহবাগের কোটা প্রথা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার আরেক কন্যা ঢাকায় একটি কলেজে অধ্যাপনার সাথে জড়িত।
অপর প্রার্থী কামাল উদ্দিন ঠিকাদার। পীরযাত্রাপুরের ৫নং ওয়ার্ডের ভোটার। পড়াশোনা তার বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজে। এর কুমিলা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছাত্রজীবনে মিছিল মিটিং ও সমাবেশের মধ্যদিয়ে তার উত্থান। ৯০ দশকের গোড়ার দিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতে গিয়ে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের মধ্যদিয়ে বুড়িচং এর রাজনীতিতে সক্রিয়। ৯২ তে এরশাদ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৯৬ তে এসে তার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক, ৯৭ তে সভাপতি। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সক্রিয় সদস্য। আর ২০০৪ সভাপতি। ২০১৮ তে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। পাশাপাশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর বর্তমানে ২০২১ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক।
তিনি বলেন এবারের নির্বাচনে পুরোদমে মাঠে থাকতে চাই। যদি এমপি’র সুপারিশ থাকে তাহলে আমি শেষ পর্যন্ত আছি । কামাল উদ্দিন বলেন, আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ এলাকার কৃতিসন্তান এবং সমাজসেবক মাননীয় এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম খান। এছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। আমি কোনো প্রফেশনাল চেয়ারম্যান হয়ে - টিআর-কাবিখা’র পেছনে দৌড়াতে চাই না। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এবার বুড়িচং এর পীরযাত্রাপুর ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে নমিনেটেড হতে চান-সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি (চলমান) আলহাজ্জ মোঃ আবু তাহের। আর এখানে বর্তমানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জাহের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত দিনে বর্তমান চেয়ারম্যান যা কিছু উন্নয়ন করেছেন, তার পুরোটাই দৃশ্যমান নয়। এখানকার যত উন্নয়ন প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরু’র দিক নির্দেশনায়। জাহের চেয়ারম্যান যা করেছেন তার সবটাই সরকারি রুটিন ওয়ার্ক, এর বাহিরে তেমন কিছু নয়, ব্যাপক অনিয়মের খবর রয়েছে এলাকাতে। দুর্নীতি আর স্বজন প্রীতির পাশাপাশি টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি, ওয়ান পার্সেন্ট এবং থোক বরাদ্ধ তহবিল তছরূপ করার অভিযোগ বিস্তর তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে দুদকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনিও আগামীতে মনোনয়ন চাইবেন। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে অনেকবার ফোনকরা হয়। কোন প্রতি উত্তর দেননি। তবে ভালো অবস্থানে আছেন, ডা. আবু মুসা ভূইয়া, কামাল উদ্দিন ঠিকাদার, এম এ আজাদ ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের। জনগণ হিসাব নিকাশ করবেন ভোটের দিন।
এদিকে সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপি নির্বাচন করতে যাচ্ছে স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। ব্যাপক সহিংসতা আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে দু’ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করেছে সিইসি। তৃতীয় ধাপে ৮৩৫টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৩৩৮ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার একক প্রার্থী হয়ে। চরমোনায়েমের ইসলামী ঐক্যজোটের হাত পাখায় ৬টি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর ৫০৪ জন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি নির্বাচন হবে ২৬ ডিসেম্বর। গত ৫দিন আগে ২৫ নভেম্বর মনোয়ন জমা দেয়া হয়েছে। এতে অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য ৫ থেকে ৮ জন পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। অনেকেই বলেন নৌকার টিকেট যারা পেয়েছেন তারা অনেকেই ‘নমিনিয়েশন বাণিজ্যে’র মধ্যেই। বাছাই হবে ২৯ নভেম্বর, আপীল করা যাবে ৩০ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ৬ ডিসেম্বর।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।