চালুর প্রায় চার বছর পর পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে নতুন কোচ যুক্ত হয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে। নতুন কোচে ৪৬২ জন যাত্রী নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ট্রেনটি। এর মধ্যে এসি কেবিনে ১২ জন, এসি চেয়ারে (স্নিগ্ধা) ১০৮ জন ও শোভন চেয়ারে ৩৪২ জন। ট্রেনটিতে মোট আসন থাকছে ৮৮৪টি।
জানা গেছে, বেনাপোল, ঝিকরগাছা, যশোর ছাড়াও অন্যান্য স্টেশন থেকে যাত্রী উঠানামা করবে। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর প্রায় চার বছর পর পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে নতুন কোচ যুক্ত হলো। বাড়ানো হয়েছে কোচ ও আসন সংখ্যা। বেড়েছে অন্যান্য সুবিধাও। বেনাপোল-ঢাকা রুট শুরুর সময়কার নতুন ট্রেনটি পরিবর্তন করে ভারত থেকে আমদানি করা পুরাতন ট্রেন দেয়ায় নেমে যায় যাত্রীসেবার মান। এতে স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিন এ নিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে যশোরবাসী। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রুটটিতে যাত্রীদের জন্যে আরামদায়ক নতুন কোচ নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছে।
পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক যাত্রায় ব্যবহৃত চাইনিজ কোচ যুক্ত হয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে। সদ্য আমদানি করা অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১২টি বগি নিয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে চলাচল শুরু করলো বেনাপোল এক্সপ্রেস। ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীসহ এ অঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঈদ উপহার হিসেবে এই বগি সংযুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোলের স্টেশন মাস্টার মো: সাইদুজ্জামান। তিনি জানান, বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেসে কোচ রয়েছে আটটি। নতুন রেকে চারটি বৃদ্ধি করে কোচ সংখ্যা ১২টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮ সিটের একটি এসি কোচ, একশ’ ৬০ সিটের দুটি এসি চেয়ার এবং সাতশ’ ৭৬ আসন বিশিষ্ট নয়টি শোভন চেয়ার কোচ থাকবে। ট্রেনটিতে মোট আসন থাকছে ৮৮৪টি। যা আগের চলা ট্রেনের মোট আসনের থেকে একশ’ একটি বেশি। এছাড়া, নতুন ট্রেনটিতে একটি নামাজের স্থান এবং সামনে ও পেছনের দিকে দুটি খাবার স্থান রয়েছে। যা আগের ট্রেনটিতে ছিল না।
মো: সাইদুজ্জামান বলেন, নতুন ট্রেনে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন। এসি কেবিন ভাড়া ১১১৬ টাকা, এসি চেয়ার ৯৩২ টাকা ও শোভন চেয়ার ৪৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়নি। বর্তমান সূচি অনুযায়ীই নতুন ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাবে।
ট্রেনের ঢাকা যাওয়া যাত্রী তরিকুল আলম জানান, আমি ভারত থেকে এসে নতুন ট্রেনের খবর শুনে আর বাসে যায়নি। এসি চেয়ারে যাচ্ছি, সিটগুলো খুবই আরামদায়ক। ভারত থেকে আসা শামছুর রহমান তার পরিবারের ৬ জন নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন এ ট্রেনে। তিনি বলেন, করোনার আগে ট্রেনে যাতায়াত করতাম। মাঝে ট্রেনের বগি পরিবর্তন করায় আর যাওয়া-আসা হয়নি। বাসেই যাতায়াত করেছি। নতুন বগির খবর পেয়ে আজ আবার সবাইকে নিয়ে এসি কেবিনে ঢাকা যাচ্ছি।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতগামী যাত্রীসহ এই অঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেনাপোল-ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন রেল কোচ দিয়ে এই সেবা চালু ছিল। কিন্তু এরপর করোনাকালে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। দেড় বছর পর ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ট্রেনটি চালু হলেও বদলে যায় উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কোচ। তার বদলে পুরোনো বগি দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস চালানো হয়। যা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্টি তৈরি হয়। বেনাপোলসহ যশোরের মানুষ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পুরাতন কোচ উঠিয়ে নতুন কোচ দেয়ার দাবি করা হয়। চলে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানও। এর মধ্যেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেনাপোল এক্সপ্রেসে নতুন কোচ সংযুক্তির ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার সম্প্রতি পদ্মাসেতু লিংকেজের জন্য চায়না থেকে উন্নত মানের একশ’ ৫০টি নতুন রেক আমদানি করেছে। তারমধ্যে একটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যশোর পর্যন্ত পুরোমাত্রায় ট্রেন চলাচল শুরু হলে বেনাপোল এক্সপ্রেস তখন পদ্মাসেতু হয়ে যাতায়াত করবে। বর্তমান রুট চালু রেখে তখন সেখানে অন্য ট্রেন যুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের বন্দর বিষয়ক পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হলো বেনাপোল এক্সপ্রেসে নতুন রেক স্থাপন। তিনি বলেন, এই রুটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভারতে যাতায়াত করেন।
ফরহাদ/অননিউজ