চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্বাচিব সভাপতি ডাক্তার মোঃ রবিউল করিমকে বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের দমন নিপড়নকারী ও ত্রিপল হত্যা মামলার আসামী উল্লেখ করে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পদায়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। অবিলেম্বে তার পদায়ন আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এর প্রতিবাদ জানিয়ে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যানার ঝুলিয়েছেন। যে কোন মূল্যে এ খুনিকে কুমেক এ প্রতিহত করার ঘোষনা দেন তারা।
জানা যায়, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) এর স্বাচিব সভাপতি ও নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রবিউল করিম ৫ আগস্টের আগে প্রায় শান্তি সমাবেশের নামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর হামলার নির্দেশ দিতেন। করেছেন চরম দমন নিপীড়ন। তার নির্দেশে যুবলীগ ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপর বর্বর হামলা চালায়। তাদের হামলায় অনেককে আহত ও নিহত হয়। আহতদের ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে দেননি তিনি।
এক সময় ছাত্রলীগ করা ও চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ সংসদসের জিএস, বর্তমানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শাখার সভাপতি ডা. মো. রবিউল করিম বিগত ১৭ বছর ধরে দলের প্রভাবে সকল ধরনের বদলী বানিজ্য, অন্যায়ভাবে ডাক্তারদের হয়রানীসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন। জামায়াত বিএনপি সমর্থিতসহ ডাক্তারসহ ভিন্নমত দমনে কঠোরতা ছিলো অকল্পনীয়। ১৯৯৩ সালে ছাত্রছাত্রী সংসদের জিএস থাকার সময় তার নেতেৃত্বে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বিচার গুলিবর্ষণে একজন ইন্টানী চিকিৎসকসহ তিন শিবির-ছাত্রদল কর্মী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনায় বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও ছাত্রদলের মেডিক্যাল কলেজ শাখার সভাপতি সেকান্দর হায়াত খানসহ আরো ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ হত্যা মামলায় ডা. মো. রবিউল করিম দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে দলের প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে রেহায় পান। বর্তমানে মামলাটি পূরজ্জীবিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
কুমেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর তার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পুলিশ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুলিতে আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে দেয়নি। ছাত্রদের উপর চরম দমন নিপীড়ন করেছেন। আমাদের এ সুন্দর ক্যাম্পাসে এমন কলংকিত শিক্ষককে আমরা দেখতে চাইনা। অবিলম্বে তার পদায়ন বাতিল করেতে হবে। তারা আরো জানান, আমাদের কলেজে কিছু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেতাত্মা অবস্থান করছে। তারা তাকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছে। যদি ডা. মো. রবিউল করিমকে কুমেকে পদায়ন করা হয় তাহলে তাকে প্রতিহত করা হবে। এবং তার আশ্রয়-প্রশ্রয়কারীদের মুখোশ উম্মেচন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমেক এর কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন রোধ ও কুমিল্লার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে এদের আজীবনের জন্য অবাঞ্চিত করতে হবে। কুমিল্লার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এমন লোকদের ঠাই হবেনা।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ডাক্তার মোঃ মিনহাজুর রহমান তারেক বলেন, ডা. মো. রবিউল করিম ছাত্রদলকর্মীসহ ত্রিপল মার্ডার এর আসামী। এছাড়া জুলাই বিপ্লবে সে চট্রগ্রাম বিভাগের শান্তি সমাবেশের মূল উদ্যোক্তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর সে নগ্ন হামলার নেতৃত্বকারী। তাকে চট্রগামের মাটি ক্ষমা করবেনা। এমন একজন লোককে আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে কিভাবে গ্রহন করবো। তাকে গ্রহন করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম, (এনডিএফ) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন) ডা. জহির উদ্দিন মোঃ বাবর বলেন, আমরা জেনেছি ডা. মো. রবিউল করিম চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্বাচিব সভাপতি। তিনি চমেক এর শিবির-ছাত্রদল কর্মী হত্যার মামলার আসামী। সে ক্ষমতায় থাকাকালে ডাক্তারদের হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। ৫ অক্টোবর এর আগে প্রতিদিন শান্তি সমাবেশের নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের দমন নিপীড়ন করেছেন। আহত ছাত্রদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করেছেন। তার নামে অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এমন বির্তকিত লোকে এ মেডিকেল কলেজে আসুক বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চাচ্ছেনা। তিনি এ কলেজে যোগদান করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমি মনে করি সকলের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে কলেজের পরিবেশ সুন্দর রাখতে কুমেকে তার পদায়ন বাতিল করে অন্যত্র পদায়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্বাচিব সভাপতি ডা. মো. রবিউল করিম জানান, আমি একটি রাজনৈতিক দল করি, তাই দলের কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করতে হয়েছে। আমি ৯২-৯৩ চমেক ছাত্রছাত্রী সংসদের জিএস ছিলাম ওই সময় আমার বিরুদ্ধে একটি হত্যা হয়। পরে এ মামলা থেকে অব্যহতি পাই। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আরো ১০/১৫টি রাজনৈতিক মামলাও হয়েছিলো। আর আমি যেহেতু সরকারি চাকুরি করি তাই আমাকে চট্রগ্রাম থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে। শুনেছি ওই কলেজের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রীরা আমার বিরুদ্ধে আপত্তি করেছে। তাই আমি এখনও যোগদান করিনি। আপত্তি থাকলে কি আর করার, অবস্থা বুঝে সিদান্ত নিব।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেলের অধ্যক্ষ ডাক্তার তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, ডা. মো. রবিউল করিমকে চচ্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে কুমিল্লায় বদলী করা হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাঁধার কারনে তিনি যোগদান করতে পারেননি। বিষয়টি আমি উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানাবো।
ডাক্তার ডা.মো.রবিউল করিম। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফটকে রবিউল করিমের পদায়ন প্রত্যাহারের দাবীতে ব্যনার ঝুলিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রী,শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
আই/অননিউজ২৪।।