ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জেনারেল কাসেম সোলেইমানির স্মরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ জোড়া বোমা বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে তেহরান। চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হন।
দেশটির দক্ষিণে এই বোমা বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক।
কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে এই হামলা এই অঞ্চলে একটি বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এটি বিশ্ববাজারে ঝাঁকুনি দিয়েছে, যেখানে তেলের দাম তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ডেপুটি মোহাম্মদ জামশিদি এক্স-এ লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন বলেছে ইরানের কেরমানে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কোনো ভূমিকা ছিল না। সত্যিই? একটি শেয়াল প্রথমে নিজের আস্তানার গন্ধ পায়।’
তিনি বলেন, ‘কোন ভুল করবেন না। এই অপরাধের দায়ভার যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) এবং সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র তাদের একটি হাতিয়ার।’
যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও কোন ঘটনায় তার মিত্র ইসরায়েলের জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেনি।
এদিকে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত ছিল না, আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে এই বিস্ফোরণে ইসরায়েল জড়িত ছিল।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘আমরা হামাসের সাথে যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করছি।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হামলার জন্য দেশের ‘দুষ্ট ও অপরাধী শত্রুদের’ দায়ী করেছেন এবং ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই জঘন্য হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার তুরস্ক সফর বাতিল করেছেন এবং ইরান বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে।
প্রায় ১৫ মিনিটের ব্যবধানে এই বিস্ফোরণগুলো ঘটে। সোলেইমানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কেরমানে সাহেব আল-জামান মসজিদের শহীদ কবরস্থানের কাছে এই বোমা হামলা চালানো হয়। এই সময় সমর্থকরা বাগদাদে ২০২০ সালের মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত সোলেইমানির স্মরণ অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিল।
ইরানের সরকারি সংস্থা বার্তা সংস্থা ‘ইরনা’ জানায়, প্রাথমিকভাবে ১০৩ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে ২১১ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাহরাম ইনোল্লাহি পরে নিহতের সংখ্যা সংশোধন করে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহতের সঠিক সংখ্যা ৯৫।’
তিনি বলেন, কিছু নাম ‘ভুলবশত দু’বার নিবন্ধিত হয়েছিল’ বলে আগের সংখ্যা ১০৩ উল্লেখ করা হয়েছিল।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসা তিন জন প্যারামেডিক নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
ইরনা বলেছে, প্রথম বিস্ফোরণটি সোলেইমানির কবর থেকে প্রায় ৭শ’ মিটার দূরে ঘটেছিল এবং অন্যটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল।
‘তাসনিম’ বার্তা সংস্থা, এটিকে ওয়াকিবহাল সূত্র বলে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বোমা বহনকারী দুটি ব্যাগ ফেটে গেছে’ এবং ‘দুষ্কৃতকারীরা স্পষ্টতই রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে’।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রক্তাক্ত লোকদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং তাদের সাহায্যের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা দৌড়ে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে ।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘আইএসএনএ’ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ‘আমরা যখন কবরস্থানের দিকে হাঁটছিলাম তখন হঠাৎ একটি গাড়ি আমাদের পিছনে থামে এবং একটি বোমা আবর্জনা ফেলার জায়গায় বিস্ফোরিত হয়।’
‘আমরা শুধুমাত্র বিস্ফোরণ শুনেছি এবং লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখেছি।’
তেহরানে হাজার হাজার মানুষ সোলেইমানিকে শ্রদ্ধা জানাতে গ্রান্ড মোসাল্লা মসজিদে জড়ো হয়েছিল। সোলেইমানির মেয়ে জেইনাব বলেছেন, ‘আমরা আজকের হিংস্র সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাই। আমি আশা করি, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে।’
সোলেইমানি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধানে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশী অপারেশন শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দেন।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সৌদি আরব, জর্ডান, জার্মানি এবং ইরাকসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়েছে।
সূত্র : একুশে টেলিভিশন
এফআর/অননিউজ