ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার ৯টি উপজেলাতে রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাকি ৬ উপজেলায় আংশিক ধান কাটলেও পুরোপুরি শুরু হতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি (হাইব্রিড-৪১০ হেক্টর, উফশী ৪৫ হাজার ৯১০ হেক্টর ও স্থানীয় ৫ হাজার ১৪৫ হেক্টর)। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমি (হাইব্র্রিড ৪০৮ হেক্টর, উফশী ৪৯ হাজার ০৫২ হেক্টর ও স্থানীয় ৫ হাজার ১৪৫ হেক্টর)। যা গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমি বেশী।
কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রিড ১ হাজার ৬৩২ মেট্টিক টন, উফশী ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৯ মেট্টিক টন ও স্থানীয় ৯ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন । সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার অষ্টগ্রাম, সুহিলপুর, বেহাইর, মজলিশপুর ও পৌর এলাকার ভাদুঘর এলাকায় কৃষকরা জমি থেকে ধান কাটছেন। বেহাইর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় জমি থেকে ধান কাটা হচ্ছে হারভাষ্টার মেশিন দিয়ে। এদিকে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশী।
পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের কৃষক আইয়ূব আলী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রোপা আমন ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর তিন কানি জমিতে (৩০ শতাংশে এক কানি) রোপা আমনের আবাদ করেছি। জমিতে সেচ দিয়েছি মাত্র একবার সেচ দিয়েছি। এতেই ভালো ফলন হয়েছে। ফলনে আমি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এ বছর ধানে চিটাও কম। তিনি বলেন খড়ের দামও বেশী। তিন কানি জমির খড় বিক্রি করেছি ১৫ হাজার টাকা। একই এলাকার কৃষক শাহিনুর ভূইয়া বলেন, এ বছর ৬ কানি জমিতে রোপা আমন ব্রি ধান-৭৫ আবাদ করেছি। রোপা আমন ব্রি ধান-৭৫ সুগন্ধিযুক্ত। ভালো ফলন হয়েছে। এই ধানের একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে বীজতলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ১১৫ দিন সময় লাগে। জমির আইল দিয়ে গেলে ধানে সুগন্ধ পাওয়া যায়। ধান কাটা শেষ হলে এই জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করব। সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রামের কৃষক আবদুল করিম মিয়া বলেন, এই বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধান কাটতে শ্রমিকের মূল্য বেশী। নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বেহাইর গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক, ফরহাদ মিয়া, সাজিদ সরকার ও প্রদীপ সরকার বলেন, এই বছর রোপা আমনের ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিকের মূল্য বেশী থাকায় আমরা হারভাষ্টার মেশিন দিয়ে জমির ধান কেটেছি। তারা বলেন, এক কানি জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কাটালে তাদেরকে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা কিন্তু মেশিন দিয়ে কাটালে দেয়া লাগে ২ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, এ বছর জেলায় রোপা আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলনও হয়েছে ভালো। সরকারি ভাবে কৃষকদেরকে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হয়েছে। এ বছর ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন রোপা আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আগামী মৌসুমে জেলাতে যাতে কোন অনাবাদি জমি না থাকে সে জন্য কাজ করছি।