ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদে দুই চিকিৎসক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে ডাঃ মোঃ সুমন ভূঁইয়া দায়িত্ব পালন করলেও বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাইজুর রহমান (ফয়েজ) আরএমও পদবী ব্যবহার করে জেলা সদর ও আশুগঞ্জ উপজেলায় নিয়মিত প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুমন ভূঁইয়া গত ০৫.০৪.২০২২ তারিখে মেডিকেল অফিসার (এমও) হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে তিনি আরএমও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অপরদিকে ডাঃ ফাইজুর রহমান (ফয়েজ) ০৮.০৮. ২০১৫ তারিখ হতে ২২.০২.২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সদর হাসপাতালে আরএমও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডাঃ ফয়েজ বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকলেও ঐ পদবী ব্যবহার না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আরএমও পরিচয় ব্যবহার করছেন। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক মহলে নানা ধরনের মুখরোচক আলোচনা চলছে।
সূত্রে জানা যায়, ডাঃ ফাইজুর রহমান (বিএমডিসি রেজিঃ নং -৪৮৪৫৩) গত ২৯. ০২. ২০২৪ তারিখে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ২৯/০২/২০২৪ তারিখে যোগদান করেন। কিন্তু যোগদান পরবর্তী কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও নানা অনিয়মের জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ (যার স্মারক নং-উস্বাক/আম/২০২৪/২৮৩ তারিখ ১১/৫/২০২৪ এবং উস্বাক/আম/২০২৪/৩৪০ তারিখ ০১/৬/২০২৪) প্রদান করা হয়েছে। এতে করে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তার বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তা সত্ত্বেও তিনি অদ্যাবধি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বরগুনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে বদলির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছেন বলে জানা যায়। কিন্তু তার বদলি সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট পৌঁছায়নি। অর্থাৎ তিনি এখনো বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। অথচ তিনি বি-বাড়ীয়া সদর হাসপাতালের আরএমও পদবীটি ব্যবহার করছেন।
দীর্ঘদিন যাবত নতুন বদলীকৃত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও ডাঃ ফাইজুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের “নাজ মেডিকেল সেন্টার” ও “আশুগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে” নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং “সার্টিফিকেট বাণিজ্য” করে যাচ্ছেন। গত ০৬.১১.২০২৪ তারিখে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে একটি মেডিকেল সনদ প্রদান করেন। তাতে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের “আরএমও” পদবীটি নিজের পদবী হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুমন ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন এবং ডাঃ ফায়জুর রহমান তার পরিচিত, তিনি বরগুনার আমতলীতে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান। ডাঃ ফায়জুর রহমান বিগত সরকারের আমলে চিকিৎসকদের মধ্যে প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি স্বাচিপের নির্বাহী সদস্য ও বিএমএ’র জীবন সদস্য (০৭০০০৯১) ছিলেন। ডাঃ ফয়েজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ককে নানাবিধ চাপে রাখতেন। নানামুখী চাপে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়কের আকস্মিক মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর জন্য ডাঃ ফয়েজকে দায়ী করা হয়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন অনিয়মের সাথে তার জড়িত ছিলেন। এই সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরগুনার আমতলীতে বদলি করা হয়, যা অনেকটা স্ট্যান্ড রিলিজের মতো।
রাজনৈতিক পদ পরিবর্তনের পর তিনি বর্তমানে বিএনপির প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় নারীনেত্রীর ছত্রছায়ায় রয়েছেন। একই সাথে পুরনো আধিপত্য পূনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্রিয় রয়েছেন। নভেম্বর ‘২৪ এর প্রথম সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ তার এক আত্মীয়কে আটক করলে তিনি তাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যান। এ সময় তিনি নিজেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আরএমও হিসেবে পরিচয় দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এক সময়ের স্বাচিপের প্রভাবশালী সদস্য ও বর্তমান আরএমও হিসেবে পরিচয় প্রদানকারী ডাঃ ফয়েজ বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নারীনেত্রীর সাথে সখ্যতা গড়েছেন। এনিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ডাঃ ফাইজুর রহমানের অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে অবৈধ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অংশ নেওয়া, নারীঘটিত কেলেঙ্কারি মত নিন্দনীয় ঘটনা থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়টি একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। তিনি তার নিজের খেয়াল খুশি মতো চলছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়মিত রোগী দেখা ও অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।