ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ভরপুর হলেও ভূমিদস্যুদের থাবা থেকে কোন রকমেই মুক্তি মিলছে না এই নদী। দিনদিন ভূমিদস্যুদের থাবায় নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। নদী পাড় দখলের কারণে তিতাস নদী আজ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।অদ্বৈত্য মল্লবর্মণের জন্মভিটা শহরের তিতাসপাড়ের গোকর্ণঘাটের ঠিক অপর পাশেই রয়েছে নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামটি।
তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে জনমানুষের বসবাস দীর্ঘকালের বলেই নদীতে তাদের সখ্যতা রয়েছে। তবে অনেকেই আবার নদীর পাড় দখল করে কৃষি জমি হিসেবে চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহও করছে। অনেকে আবার নিজ দখলে থাকা নদীর পাড়টি কৃষি জমি দেখিয়ে স্থায়ী ব্যবহারের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বন্দোবস্তের আবেদন করেই স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রসুলপুর গ্রামের মৃত আবদুল হাই এর ছেলে সৌদী প্রবাসী আবদুল কাদির তিতাস নদীর ১৪ শতক জায়গা দখল করে রেখেছে। জায়গাটি স্থায়ীভাবে পাওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর নাটঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দরখাস্ত করেন। দরখাস্ত মঞ্জুর হয়েছে কি না তার কোন ইয়ত্তা না করেই নদীর প্রায় ৪ শতক জায়গা দখল করে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করেন। গ্রামে ঘুরে দেখা যায় সে ছাড়াও একাধিক ব্যক্তিই নদীর জায়গা দখল করে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করে দীর্ঘবছর দখল করে আসছে। এর মাঝে আবদুল কাদিরের আপন চাচাতো ভাই মৃত মোবারক সর্দারের ছেলে প্রবাসী ইয়াকুব মিয়াও সাড়ে তিন শতাংশ জায়গা দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছে। অন্যদিকে একই গ্রামের মৃত মন্তা মিয়ার ছেলে ইলু মিয়া নদীর ২শতক জায়গায় তিনতলা ইমারত করে দীর্ঘ ১০বছর বসবাস করছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী আবদুল কাদিরের স্ত্রী রিমা বেগম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে থাকেন। আমরা এ জায়গাটি দীর্ঘদিন থেকেই কৃষিচাষ করে ব্যবহার করতেছি। আমার স্বামী গত দুই বছর আগে এখানে বিল্ডিং করছে, এ পর্যন্ত কেউ এসে বাঁধা দেয় নাই। ইয়াকুব মিয়ার ছোট ভাই প্রবাসী আরফান আলী জানান, আমাদের জায়গা অধিগ্রহণ করে তিতাসের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমার ভাই এখানে জায়গা খালি পেয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করেন গত ৩ বছর আগে।
এ বিষয়ে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন “নোঙর” ব্রাহ্মণবাড়িয়া সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি জায়গাটি ১নং খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত। যদি তা-ই হয় তবে এখানে স্থায়ী স্থাপনা তৈরির কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি নোঙর’র পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করার পর নির্বাহী প্রকৌশলী মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান সংগ্রহ করে লিখিত আবেদন করতে পরামর্শ দেন। মজার বিষয় হলো এগুলো সামাজিক সংগঠনকেই করতে হবে কেন? দ্বায়িত্ব প্রাপ্তরা তাহলে করছেটা কী? নদী সীমানা নির্ধারণ, সীমানা পিলার স্থাপন, দখল উচ্ছেদ নোঙর’র দাবী দীর্ঘদিনের। দুঃখজনক হলেও সত্য এই ধরনের কার্যক্রম তিতাস নদীতে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
মহামন্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং- ৩৫০৩/২০০৯ ও ৫৫০৮/২০১০ এর আদেশ মোতাবেক দেশের নদ-নদীতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ভরাট ও স্থাপনা অপসারণের লক্ষ্যে যে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম চলছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর ফোরশোর/তীরভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটঘর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নায়েব সালেহ আহমেদ বলেন, আমি গত এক বছর আগে এখানে বদলী হয়ে এসেছি। এখনো বিস্তারিত বলতে পারবো না, তবে আমি জানি এ জায়গাটি রসুলপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ৮৮৫ দাগের ৭ শতক ও ৮৭৩ দাগের ৭ শতক খাস জিম ভিটি দেখিয়ে স্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য আবদুল কাদির গত দুই বছর পূর্বে দরখাস্ত করেছে যা এখনো দরখাস্ত মঞ্জুর হয়নি।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, নদীর জায়গা বন্দোবস্ত করে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সেখানে স্থায়ী ইমারততো না-ই। তারা কিভাবে ইমারত নির্মাণ করেছে আমি বিষয়টি জানিনা। আমি ভূমি নায়েবকে সেখানে পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি। যদি নদী দখল করে ইমারত নির্মাণ করে তাহলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।