ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সরকারি জমি দখল নিয়ে বিরোধের সংঘর্ষে আহত আলমগীর মাতুব্বর (৬২) মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার তাঁর মৃত্যু হয়। এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর পক্ষের লোকজন আলগী ইউনিয়নের ছোট খারদিয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকেলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ২৫ জন আহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। তাঁরা হলেন-নুরুমোল্লা (৫২), কিফায়েত মোল্লা (১৫), সিকান্দার শেখ (৫১), দুলাল মোল্লা (৬৫)। অন্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত রোববার সকালে এই প্রতিবেদককে জানান , গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত প্রায় ১৫ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে আলমগীর মাতুব্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬টায় মারা যান। তাঁর মাথায় আঘাত ছিলো। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ধারণা, হার্টঅ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে ছোট খারদিয়া মৌজায় জলিল মাতুব্বরের বাড়িসংলগ্ন প্রায় এক বিঘা একটি সরকারি জমি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি আবেদন করেন। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান সেই জমি দখলমুক্ত করে লাল পতাকা টানিয়ে দেন। পাশাপাশি সরকারি জমির সীমানাও নির্ধারণ করেন। এর জের ধরেই কয়েকদিন ধরে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
এ নিয়ে শনিবার বিকেলে জলিল মাতুব্বর ও আইয়ুব মাতুব্বরের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সরোয়ার মাতুব্বর ও কাওসার মাতুব্বরের লোকজনের। সন্ধ্যার পর উভয়পক্ষ ছোট খারদিয়া গ্রামের প্রধান সড়কে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। সংবাদ পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত হন।
রোববার সকালে জলিল মাতুব্বর ও আইয়ুব মাতুব্বরে পক্ষের আলমগীর মাতুব্বর মারা যান। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জলিল মাতুব্বরের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তাদের প্রতিরোধে গিয়ে কয়েকজন নারী শ্লীলতাহানির শিকার হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই দুই পক্ষের লোকজন প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা-মোকদ্দমাও চলছে। গ্রামের নিরীহ মানুষ ওই দুই পক্ষের কাছে জিম্মি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত তাঁরা।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শান্ত/অননিউজ