পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই ভারত থেকে দেশে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরিক্ষা ও করোনা টেস্ট করা হলেও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালকদের করোনা পরিক্ষার আওতায় আনা হয়নি। এতে করে দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রামনের আশংকা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১শ ৮০ থেকে ২শ পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শজন চালক সহকারী দেশে প্রবেশ করছে। যাদের কাউকেই করোনার পরিক্ষার আওতায় আনা হয়নি। এদিকে করোনার কারনে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে যাত্রী যাওয়া বন্ধ রয়েছে তবে ভারত থেকে মাঝে মধ্যে ২/৪জন পাসপোর্ট যাত্রী দেশে ফিরছেন।
ভারতীয় ট্রাক চালক নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি।কিন্তু না আমাদের ভারতে করোনার পরিক্ষা করা হচ্ছে না বাংলাদেশে করোনার পরিক্ষা করা হচ্ছে কোন দেশেই করোনার পরিক্ষা করা হচ্ছেনা। যেহেতু করোনা অনেকাংশে বেড়ে গেছে যার কারনে আমরা খুব আতংকের মধ্যে রয়েছি।
অপর ট্রাক চালক অনিল কুমার বলেন, আমরা ভারতীয় ট্রাক চালকরা ভারত থেকে রফতানিকৃত পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি খালাস করতে। ইতোমধ্যেই ভারতে ব্যাপক হারে করোনা বেড়ে গেছে যার কারনে আমরা আতংকের মধ্যেই রয়েছি কিন্তু ভারত থেকে রফতানিকৃত পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ভারতে আমাদের কোন করোনা পরিক্ষা করা হচ্ছেনা আবার ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছি এখানেও কোন পরিক্ষা করা হচ্ছেনা।
শুধুমাত্র মাস্ক পড়ে গাড়িতে স্যানিটাইজড করতিছে এভাবেই কার্যক্রম চলছে। এবার কার মধ্যে করোনা আছে সেটাতো বোঝা যাচ্ছেনা আমার মধ্য দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে আবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে পারে তাই পরিক্ষার ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।
বাংলাদেশী ট্রাক চালক সাগর খান বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনা খুব বেড়ে গেছে কিন্তু ভারত থেকে যেসব ট্রাক আসছে তাদের চালকরা কোন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না আমাদের বাংলা ট্রাকের চালকরা যারা পণ্য নিতে আসছে তারাও কেউ কোনপ্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা। ভারতীয় চালকরা বন্দরে আসছে তাদের কোন প্রকার করোনা টেস্ট করা হচ্ছেনা তারা আমাদের বাংলা চালকদের সাথে মিশছে শ্রমিকদের সাথে মিশছে তাই তাদের মাধ্যমে আমাদের ও শ্রমিকদের মাঝে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এতে করে আমরা আতংকের মধ্যে রয়েছি।তাই তাদের যেন করোনা পরিক্ষার আওতায় আনা হয়, আলাদা রাখার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় এলাকাবাসী মুন্না হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই ভারতে ব্যাপক হারে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের হার বাড়ছে। সেকারনে পশ্চিমবঙ্গের সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। অনেক স্থানে রাত্রিকালীন বিধি নিশেষ জারী করা হয়েছে। কিন্তু হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক দেশে প্রবেশ করছে তাদের চালক ও সহকারীদের কোন ধরনের করোনা পরিক্ষার আওতায় আনা হয়নি।
যেখানে ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে পাসপোর্টে আসা যাত্রীদের করোনা পরিক্ষার সনদ নিয়ে আসতে হচ্ছে। তারপরেও তাদের কে পুনরায় স্বাস্থ্য পরিক্ষা ও করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ট্রাক চালকদের সংস্পর্ষে বাংলাদেশী চালক ও শ্রমিকদের আসার কারনে করোনার সংক্রামন ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। তাদের করোনা পরিক্ষার আওতায় আনা হলে আমরা ঝুকিমুক্ত থাকতে পারতাম।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে মেডিকেল টিমের স্বাস্থ্য সহকারি জাহাঙ্গির আলম বলেন, ভারত থেকে আগত প্রত্যেক পাসপোর্ট যাত্রীদের ৪৮ঘন্টার মধ্যে করোনার আরটিপিসিআর বা এন্টিজেন পরিক্ষার সনদ রয়েছে কিনা সেটি দেখছি। যাদের আরটিপিসিআর এর টেস্ট সনদ নেই তাদের ১৪দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।করোনার টিকা গ্রহন করেছেন কিনা সেটির সনদ দেখা হচ্ছে।
তার শরীরে কোন ধরনের লক্ষ্যন রয়েছে কিনা যাদের এমন মনে হচ্ছে তাদের করোনা পরিক্ষা করা হচ্ছে। আর করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিষয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বেশী গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে সাথে সাথে তার করোনার এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে তাতে পজিটিভ আসলে আরটিপিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে তবে এখন পর্যন্ত একটিও এই ধরনের পাওয়া যায়নি।তবে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালকদের কোন পরিক্ষা করা হচ্ছেনা।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, করোনার কারনে বিগত দিনে বন্দর দিয়ে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি রফতানি করা হচ্ছিল করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন রোধে সেই ধরনের নিয়ম মেনেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি চালু রাখা হয়ছে।ভারতীয় ট্রাক বন্দরে ঢোকা মাত্রই প্রত্যেকটি গাড়িকে জীবানুনাশক দিয়ে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে।
সেই সাথে প্রত্যেক চালকদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। গাড়িতে রাখা পণ্যের কাগজপত্র নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে বিশেষ ঝুড়ির মাধ্যমে সংগ্রহ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বন্দরের ভেতরে ট্রাক প্রবেশের পর আনলোড হওয়া পর্যন্ত চালকদের একটি নিদ্রিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে আনলোড শেষে ট্রাকসহ তাদের আলাদা নিদ্রিষ্ট স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা গোসলখানা আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারা যেন সেই স্থান থেকে বের হতে না পারে সেবিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা নজরদাড়ি করা হচ্ছে। তবে ওমিক্রনের বিষয়ে একটি মিটিং হয়েছে কিন্তু সরকারি কোন নির্দেশনা পাইনি পুর্বের ব্যবস্থাপনায় বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি চালানো হচ্ছে। তবে ভারতে যেভাবে ওমিক্রন শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও দিন দিন তা বাড়ছে এজন্য আমরা আতংকে রয়েছি।সরকারি কোন নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।