জমিলা খাতুন ৬২ (ছদ্ম) নাম। জ্বর কাঁশি নিয়ে হাসপাতালে আসলে দু’জন দালাল তাকে নিয়ে যায় আরএমও ডাক্তার মানিকের চেম্বারে। ব্যবস্থাপত্র হাতে দিয়ে টাকা চাইলে কাপড়ের আচলে বেঁধে রাখা দু’শ টাকা খুলে ডাক্তারের হাতে দেয় জমিলা। একশ’ টাকা কম হওয়ায় এই টাকা তার নাকে মুখে ছুড়ে ফেলেন ডা: মানিক।
হাসপাতালের আউটডোরে আসা রুগীদেরকে দালালদের দিয়ে টেনে চেম্বারে নিয়ে আসার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায় অহরহ। শুধু তাই নয়, গত সাত বছর একই স্টেশনে থেকে জামায়াতে ইসলামীর দলের ফান্ডে টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিক কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল (আরএমও) অফিসারের দায়িত্বে আছেন।
এই প্রতিবেদক হাসপাতালে অন্য কাজে যাওয়ার পথে গেটের মধ্যে দেখেন জমিলা খাতুন আচল দিয়ে মুখ মুচতে মুচতে বেড়িয়ে আসছেন। চাচি কি হয়েছে আপনার? এমন প্রশ্নে ভেজা চোখে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ফার্মেসিত থাইক্কা ওষধ খাইছি জ্বর ভালো অয় না। হুন ছিলাম হাসপাতালে মাগনা (বিনামূল্যে) চিকিৎসা দেয়। ওষুধ কিননের লাইগা ২শ’ টাহা আনছিলাম কিন্তু তার লগের বেডায় কয় স্যারকে ভিজিট দেও। এই টাহাটা ডাক্তার মানিককে দেওনে হে বেডা টাহাডা আমার নাহে মুখে ফালাইছে। ১শ’ টাহা নাহি কম হইছে। পরে টাহাডা মাটিত্তে তুইল্লা আবার টেবিলের উপরে দিয়া আইছি। এহন ওষধ কিন্নাম কি দিয়া!
একটি অভিযোগ ও মুরাদনগর হাসপাতালে গত পাঁচদিন সময় দিয়ে জানা যায়, ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিক ২০১৪ সালের আগস্টের ২০ তারিখ ওই হাসপাতালে জয়েন্ট করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে।
প্রায় সাত বছর এই উপজেলায় চাকুরী করার সুবাধে বিভিন্ন ক্লিনিক মালিকদের সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠে। যার ফলে সাধারণ রোগ নিয়েও কোন রুগী তাঁর কাছে গেলে বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরিক্ষা দিয়ে নিরীহ মানুষদের পকেট কাটে সে। তা ছাড়া তার ছোট ভাই ও ভাগিনা দিয়ে রুগী টেনে হাসপাতাল কোয়াটার তার চেম্বারে নিয়ে আসেন। দু-তিন ঘন্টা হাসপাতালে সময় দিয়ে সকাল, দুপুর নিজ কোয়াটারে এবং বিকেলে হাসপাতাল গেটে অবস্থিত রাজ্জাক প্লাজার নিচতলায় তিন’শ টাকা ভিজিট নিয়ে রুগী দেখেন সে। শুরু তাই নয়, কোম্পানীর কাছ থেকে ৪৮ ইঞ্চি টিভি ও ফ্রিজ নেয়ার বিষয় স্থানীয়দের মুখে মুখে।
মুঠো ফোনে এসব বিষয়ে ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোন দলের ফান্ডে টাকা দেই না। এসব অভিযোগ মিথ্যা। দু’একজন ডাক্তার রুগী কম পায় তাই তারা মিথ্যা রটায়।
উপজেলা জামায়াতের আমীর আনম ইলিয়াস মুঠোফোনে বলেন, ‘ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিক আমাদেরকে ফান্ডে কোন টাকা-পয়সা দেন না’ এই বলেই ফোন লাইন দেন।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকতা ডা: নাজমুল আলম বলেন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিকের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নিব।