টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবাধে কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষি আবাদি জমি, নদী তীরের মাটি ও পাহাড়ি টিলা। এমনকি নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানিয়ে মাটি পরিবহনের ঘটনাও ঘটছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকদের মধ্যে কেউ কেউ অর্থের লোভে, বেকায়দায় পড়ে আবার কেউ কেউ চাপে পড়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে মাটি বিক্রি করছেন। আর নদীর তীর কেটে নেয়া হচ্ছে প্রভাব খাটিয়ে। মাটি ব্যবসায়ীদের এমন দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন এ এলাকার মানুষ।
সরজমিন, উপজেলার মির্জাপুর পৌরসভার বংশাই নদী সংলগ্ন কুমারজানি, হাতেম টাউন অংশ, ফতেপুর ইউনিয়নের গোড়াইল, থলপাড়া, পারদিঘী, বৈলানপুর, জামুর্কী ইউনিয়নের গুনটিয়া, গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়া পাড়া চক, বংশাই নদীর রশিদ দেওহাটা অংশ, লৌহজং নদীর কদিম দেওহাটা (পাহারপুর ব্রীজের উত্তর অংশ), বহুরিয়া ইউনিয়নের আনাইল বাড়ি, চান্দুলিয়া, লৌহজং নদীর মীর দেওহাটা— বুধিরপাড়া অংশে বাঁধ দিয়ে বুধিরপাড়া চক, বাঁশতৈল ইউনিয়নের নয়াপাড়া, গায়রাবেতিল, লতিফপুর ইউনিয়নের বংশাই নদী সংলগ্ন ত্রিমোহন, চাঁনপুর ব্রীজের পশ্চিম পাড় ও পূর্ব পাড়, আজগানা ইউনিয়নের বংশাই নদী সংলগ্ন ভুলুয়া অংশ, কুড়িপাড়া, তেলিনা, আজগানা পূর্ব পাড়া, তরফপুর ইউনিয়নের ছিট মামুদপুর, মামুদপুর, ধানচালা, ডৌহাতলী পরিদর্শন করে অন্তত ৫০টি স্পটে অর্ধশতাধিক ভেকু (খনন যন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার আরো বেশ কিছু জায়গায় মাটি কাটার প্রস্ততি চলছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এভাবে অবাধে মাটি কেটে নেয়ার ফলে উপজেলার কৃষি আবাদি জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে, নদীর তীর এলাকায় মাটি কাটার ফলে নদীর গতিপথ পাল্টে রাস্তা ঘাট বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় পড়ছে এমনকি বিগত সময়ে নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে অসংখ্য বাড়ি ঘর, রাস্তা ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে পাহাড়ি এলাকার লাল মাটির টিলা কেটে নেওয়ায় সেখানকার জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আর মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ির ওভারলোডে গ্রামীণ রাস্তা ঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা এলাকার বাসিন্দা লাভলু মিয়া বলেন, বাইমহাটি এলাকার ছানোয়ার আমার বাড়ি সীমানা ঘেঁষে মাটি কাটছে। এইভাবে মাটি কাটলে আমার বাড়ি যেকোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এর আগেও সে এখানে মাটি কাটছে।
পাথালিয়া পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহিণী বলেন, দিনরাত এখান দিয়া ট্রাক চলে। আগে আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু কোন কাজ হয়না, মাটি কাটা চলেই। তাই এখন আর প্রতিবাদ করিনা।
সাধারণ মানুষের দাবি, অর্থদণ্ড দিয়ে এই মাটি ব্যবসায়ীদের রোধ করা যাবেনা। প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. সঞ্জয় কুমার পাল বলেন, এভাবে কৃষিজমি ধ্বংস হতে থাকলে এ এলাকায় কৃষি বিপর্যয় নেমে আসবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মাটি ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানা করছি এবং খোঁজ নিয়ে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে কাজটি সহজ হয়ে যায়।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com