কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় দায়ের করা ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরেরর সশ্রম কারাদন্ড দেন বিজ্ঞ আদালত। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে বাবা-ছেলেও রয়েছে।
অপরদিকে কুষ্টিয়া ইবি থানার একটি হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১ এর বিচারক তাজুল ইসলামের আদালতে দুই আসামির উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বুধবার বিকালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আতিরিক্ত আদালত-১এর বিচারক তাজুল ইসলামের আদালতে দুই আসামির উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।
এসময় অপর দুই আসামি পলাতক ছিলেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের সাদুর ছেলে কাবুল ওরফে কালু, একই উপজেলার চাঁদগ্রামের বিশুর ছেলে মোস্তক আলী মস্তান, তার ছেলে গোলাম রেজা রোকন এবং সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে মিলন। আসামিদের মধ্যে গোলাম রেজা রোকন ও মোস্তাক আলী মস্তান পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১২ আগস্ট তিন সন্তানের জননী দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর এলাকার বাসিন্দা ওই নারী প্রতিদিনের ন্যায় কাজ করতে আল্লাহরদর্গা এলাকার একটি ডালের মিলে কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন তিনি বাসায় না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন ভেড়ামারা থানা পুলিশ ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া এলাকায় একটি বাঁশঝাড়ের মধ্যে থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় সাতজনকে আসামি করে থানার হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ভেড়ামারা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ১৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণের পরে আদালত ২৪ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
আদালতের সরকারি কৌশুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী জানান, এ মামলায় স্বাক্ষ্য ও প্রমানের ভিত্তিকে চার আসামি সন্দেহতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই দন্ডপ্রাপ্ত আসামি কালু এবং মিলনকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। দন্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি গোলাম রেজা রোকন ও মোস্তাক আলী মস্তান পলাতক রয়েছেন।
অপর দিকে সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার সুগ্রীবপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে (পলাতক) আব্দুল আজিজ ওরফে মনি পাল (৪৬), একই গ্রামের মৃত চাঁদ আলীর ছেলে আব্দুল খালেক (৪৮) এবং মৃত ইজ্জত আলী পালের ছেলে আনোয়ার আলী (৪০)। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৭ জুলাই রাতে আব্দুল ওয়াহেদের বাড়িতে আজমতের একটি গরু প্রবেশ করে এবং তার বেঁধে রাখা গরুকে শিং দিয়ে আঘাত করে।
তখন আব্দুল ওয়াহেদ লাঠি দিয়ে মেরে ওই গরুটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় আসামি আব্দুল আজিজের হুকুমে আজমত আলীসহ একদল মানুষ লাঠিসোটা, ছেন্দা, রামদা, রড এবং হাতুড়ি নিয়ে হামলা করে। এতে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে গুরুতর আহত হয় আব্দুল ওয়াহেদ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই দুপুরের দিকে আব্দুল ওয়াহেদের মৃত্যু হয়। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ওইদিনই নিহত আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে ইবি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইবি থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে ২৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে মঙ্গলবার আদালত এ রায় দেন।
আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল খালেক এবং আনোয়ার আলীকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। দন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি আব্দুল আজিজ পলাতক রয়েছে।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24