ভেড়ামারায় ধান সংগ্রহ মাত্র ১০ শতাংশ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সরকারি খাদ্য গুদামে এবার আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩২ টন। অথচ গত দুই মাসে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ (২৫ টন)। হাতে বাকি ১৩ দিন। এ সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩২ টন। ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০ টাকা। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩০ টন।
অপরদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬৯ টন। চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। উপজেলার ১০ জন মিলারের কাছ থেকে এ চাল সংগ্রহের চুক্তি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মিলারদের মধ্যে ভাই ভাই মোল্লাজী রাইস মিল ১৫ টন ৮৪০ কেজি এবং বিদ্যুৎ রাইস মিল ৭ টন ৫৩০ কেজি চাল সরবরাহ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৩৮ টন। উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৫৩৫ টন। খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ বিষয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয় মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম একটু বেশি। সরকারি খাদ্য গুদামে ধান পরিবহন ব্যয়, বস্তার দাম, আর্দ্রতার জন্য ১ কেজি বেশি ধান দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান তাঁরা।
কৃষকেরা বলেন, খোলাবাজারে বিক্রি করলে এসব খরচ হয় না। ধান ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে নগদ টাকায় ধান কিনে নিয়ে যান। সে তুলনায় সরকারি মূল্য সমান হলেও কিছু টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোগান্তিও কম। এ কারণে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে তাঁদের অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছেন।
ধান চাষি হাসান বলেন, এবার খাদ্য গুদামে ১০ বিঘা জমিতে উৎপাদিত সব ধান বিক্রি করেননি। কারণ টনপ্রতি শ্রমিক খরচ, বস্তার জন্য ঢলন ও বস্তা খরচ, পরিবহন খরচসহ ভোগান্তি হয়। যদি বেশি দাম পাওয়া যেত তাহলে ভোগান্তি বা খরচ গায়ে লাগত না। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি খাদ্য গুদামের ধানের মূল্য ১ হাজার ৮০ টাকা। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকার ওপর। ব্যবসায়ীরা বাড়ি এসে নগদ টাকায় ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এদের ৭০ কেজি বস্তায় ১ কেজি ধান দিতে হয়। সেখানে খাদ্য গুদামে ১ মণে এক কেজি দিতে হয়। আবার পরিবহন ব্যয় হয়। এসব কারণে অনেক চাষি গুদামে ধান সরবরাহে অনীহা দেখাচ্ছেন।’
এদিকে মিলাররা জানান, তাঁদের মতো ছোট মিলারদের সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ অটো মিলারদের সরকার ঋণের সুবিধা দিচ্ছে। তাঁরা সময়মতো প্রচুর ধান ক্রয় করে মজুত করে রাখেন। তাঁদের লোকসান হচ্ছে না। তাঁদের মতো ছোট মিলারদের এবারও লোকসান গুনতে হবে।
মেসার্স শ্যামল রাইচ মিলের স্বত্বাধিকারী বুলবুল কবির বলেন, খোলাবাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। কিন্তু সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। খরচ হচ্ছে ৪২ টাকা। এতে কেজিতে ছোট মিলারদের লোকসান হবে ২ টাকা। তিনি আরও বলেন, এখন চাল সরবরাহ না করলে যে সিডি করেছি তা বাতিল হয়ে যাবে তিন বছরের জন্য। লোকসান হলেও বাধ্য হয়ে চাল সরবরাহ করতে হয়। সরকারের উচিত ছোট মিলারদের ঋণের সুবিধা দেওয়া।
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মিরাজ হোসেন বলেন, এ বছর বোরো ধান ও চালের মতো আমন ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে চিন্তায় আছি। সরকারি দাম বাজার দর প্রায় সমান। তাই গুদামে ধান দিতে কৃষকের আগ্রহ কম। চলের ক্ষেত্রে ১০ জন মিলারের মধ্যে দুজন সরবরাহ করেছে বলে জানান তিনি।