ভারপ্রাপ্তদের ভারে নুয়ে পড়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান। এ সঙ্কটের কারণে শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। ভেড়ামারা উপজেলায় বর্তমানে ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে।
এসব বিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম।পাশাপাশি দীর্ঘদিন সহকারী শিক্ষকের ১৮টি পদও রয়েছে শূন্য। চলতি দায়িত্ব হিসাবে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন। একজন শিক্ষকের দুই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না হওয়ার ফলে লেখাপড়া চরম ব্যাহত হচ্ছে।
ভেড়ামারা উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক পদশূন্য বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঠাকুর দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়টা, মালিপাড়া, ক্ষেমিরদিয়ার, বৃত্তিপাড়া, পশ্চিম বাহিরচর বারো মাইল, জুনিয়াদহ, রূপালী আটষট্টিপাড়া, রারোদাগ, সোলেমানিয়া, নলুয়া, আজাদ, গোলাপনগর চাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে।
এখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ। উপরে উল্লেখিত কয়েকটি বিদ্যালয়ে ২ জন তিনজন সহকারী শিক্ষক রয়েছে। এমনিতেই শিক্ষক সঙ্কট তার উপর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারেন না। অফিসের কার্যক্রম করতে সময় শেষ হয়ে যায়।
৭ জন শিক্ষকের বিপরিতে ২ থেকে তিন জন শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে চলছে পাঠদান।এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যহত হচ্ছে। এর ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। একাধিক শিক্ষকেরা জানান, প্রধান শিক্ষকরা দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি অবশিষ্ট সময়ে পাঠদান করেন।
এখানে সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হয়ে এ কাজ করলে তার পক্ষে শতভাগ পাঠদান করা কঠিন হয়ে পড়ে। দাফতরিক কার্যক্রমে ভারপ্রাপ্তরা ব্যস্ত থাকায় পাঠদান ব্যহত হওয়ায় লেখাপড়ার মান পড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক নিয়ন্ত্রণ করেন। পদ খালি থাকায় সহকারী শিক্ষক হয়ে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করছি। একজন সহকারী শিক্ষকের যে কাজ তা করতে পারছি না। সৃষ্টি হচ্ছে নানা সঙ্কট। এখানে ৫ জন সহকারী শিক্ষকের পদ থাকলেও আছে ৩ জন। এরমধ্যে একজন পিটিআই ট্রেনিং করছে। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করাসহ পাঠদান ২ জন শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব হয়না। ফলে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।
রায়টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম নবী বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে । সব সময় স্কুলের খাতাপত্র দাফতরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে তেমন মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। দুইজন শিক্ষক ২৫০ জন শিক্ষার্থীদের কিভাবে পাঠদান সম্ভব?
তিনি আরও বলেন, তার উপর ভারপ্রাপ্ত হয়ে যারা দায়িত্ব পালন করছি আমরা কোন বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। অথচ চলতি দায়িত্ব পালনকারী প্রধান শিক্ষকরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। একই দায়িত্ব বছরের পর বছর পালন করলেও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না।
ভেড়ামারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান আরা বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে তার তালিকা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। দ্রæত শূন্যপদগুলো পূরণ করা হবে আশা করছি।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24