দেশের প্রথম ৬ লেনের মধুমতি সেতু ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর ঢল নামে উৎসক জনতার। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কাটিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পেরে খুশি যানবাহন চালকসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম ৬ লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধনের পর উৎসুক মানুষের মাঝে উল্লাস সৃষ্টি হয়। অনেকে পায়ে হেটে পাড়ি দিয়েছেন সেতু। আবার কেউ সেতুর ওপর দাড়িয়ে মধুমতি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। আনন্দ-উল্লাস, আবেগ-ভালবাসার অন্যরকম অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
সেতু উদ্বোধনের পর অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুরছেন স্বপ্নের মধুমতি সেতু দিয়ে। স্বপ্ন যেন বাস্তবে ধরা দিয়েছে সেতু এলাকার দুপাড়ের মানুষের মাঝে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
সেতুটি চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, যশোর, খুলনা, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়নের আশা করছেন সবাই। দীর্ঘদিনের ফেরীপারাপারের দুর্ভোগ কাটিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে যেতে পেরে খুশি যানবাহন চালকরা।
এদিকে, উদ্বোধনের দিন রাত ১২টা ১মিনিট থেকে মধুমতি সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই সেতু পারাপারের অপেক্ষায় ছিল মোটরসাইকেল, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন। ডিজিটাল পদ্ধতির ৮টি টোল বুথের মধ্যে প্রথম দিনে ৪টি চালু থাকায় সেতুর দুই পাশে যানবাহনের সারি তৈরি হয়। তবে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে সবগুলো টোল বুথ চালু হওয়ার আশা কর্তৃপক্ষের।
মধুমতি সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, মধুমতি সেতুেত টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে- বড় ট্রেইলার ৫৬৫টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজি অটোরিক্সা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে নড়াইলের কালনাঘাট এবং পূর্বপ্রান্তে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে।
নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন হয়েছে।
কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে।