কুমিল্লায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় বিপাকে পড়া মানুষের পাশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসে দাঁড়াচ্ছে। এসব অসহায় মানুষের দিকে এবার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
এ সংগঠনের পরিচালক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, সুশান্ত বর্ণিক, শেখ আব্দুর রহমান, সোহান শেখ, আব্দুল্লাহ, জিয়াদুল ইসলাম লিমন, রিয়ান মোল্লা ও শরিফ শেখ নামের ৮ জন সদস্য জেলার দুর্গম মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে বানভাসি ব্যক্তিদের খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসাসেবা এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন। গত শুক্রবার শুরু হওয়া তাঁদের এই সহায়তা কার্যক্রম আজ সোমবার শেষ হয়েছে।
সংগঠনের সদস্যদরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা ৮ জন গত শুক্রবার মনোহরগঞ্জের মৈশাতুয়া নিলকান্ত সরকারি ডিগ্রী কলেজের আশ্রয়ন কেন্দ্রে যান। এই সদস্যদের বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
নিলকান্ত সরকারি ডিগ্রী কলেজের আশ্রয়ন কেন্দে ক্যাম্প করে থেকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি নিয়ে যান খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী। এ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন গ্রামের দুইশত বন্যার্ত পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। এসব সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবন, আলু, পিয়াজ, লবন, সাবান, মোমবাতি, মশার কয়েল, গ্যাস লাইটার ও মেয়েদের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। মৈশাতুয়া নিলকান্ত সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া তিন হাজার ব্যক্তিকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়। এই আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এক হাজার ব্যক্তিকে পোষাক সামগ্রী ও পাঁচশত ব্যক্তিকে দিয়েছেন চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ।
জ্ঞানরে আলো পাঠাগাররে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংবাদিক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলনে, কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যা পরস্থিতিি দখেে সংগঠনরে পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া উপজলোবাসীর কাছে বর্ন্যাত মানুষরে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তাঁরা। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপজলোর বিভিন্ন শ্রেনিপেশার লোকজন সহায়তা করেন। এরপর তাঁরা ৮ জনের একটি দল মনোহরগঞ্জ উপজলোয় এসে টানা চার দিন থেকে বর্ন্যাত ব্যক্তিদের নানাভাবে সহায়তা করনে।
মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল আরও বলনে, ‘বর্ন্যাত ব্যক্তিরা যে কী পরমিাণ কষ্টে আছে সেটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দুর্গম এলাকার অনকে গ্রামে আমরা গিয়েছি মানুষেরা খাবার, চিকিৎসা, ঘরবাড়ি সংস্কারে সহায়তা প্রয়োজন। আমরা সীমিত পরিসরে হলেও এ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারার একটা তৃপ্তি নিয়ে ফিরছি। চেষ্টা করব আবার আসার।’
নিলকান্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজ আশ্রায়ন কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সোহাগ বলেন, এই আশ্রায়ন কেন্দ্রে ৬৯৫ জন বন্যা দূর্গত ব্যক্তিরা রয়েছেন। জ্ঞানের আলো পাঠাগার টিম একদিন রান্না করা খাবার দিয়েছেন। নৌকা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যা কবলিতদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও কাপড় সামগ্রী বিতরণ করেন। অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সদস্যরা মনোহরগঞ্জে বন্যার্তদের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তাদের এই কার্যক্রম এই এলাকায় ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে।
মনোহরগঞ্জের ইউএনও উজালা রানী চাকমা বলেন, ‘মৈশাতুয়া নিলকান্ত ডিগ্রি কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে জ্ঞানের আলো পাঠাগার টিমের সাথে দেখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা টানা কয়েক দিন মনোহরগঞ্জে থেকে মানুষের জন্য যে কাজ করেছেন, সেটি প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অনেকেই মনোহরগঞ্জে এসে একইভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখানে যাঁরাই ত্রাণ দিতে আসেন, আমরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করি।’