একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ও দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি সুলতান মাহমুদ ফকিরকে ময়মনসিংহ শহরের ভাটিকাশর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। সোমবার দুপুরে র্যাব-১৪ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় শহীদ ইউনুছ আলীর ছেলে রুহুল আমিন ২০১৫ সালে ময়মনসিংহের আদালতে এ মামলা দায়ের করলে পরে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-০৭/২০১৮ দায়ের হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্দে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
র্যাব জানায়, ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত দুইজন আসামি রায়ের আগে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে এবং গত ২৩ জানুয়ারি সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ সাতজনকে মৃত্যুদন্ড আদেশ প্রদান করেন। র্যাব পলাতক আসামি গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (৫ ফেব্রæয়ারী) রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুলতান মাহমুদ ফকির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুলতান মাহমুদ ফকির মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত সুলতান মাহমুদ ফকির মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে। সে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুলতান মাহমুদ ফকির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।