ময়মনসিংহে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ।।
ময়মনসিংহে যুদ্ধাপরাধ মামলার দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার পৃথক এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো ঈশ্বরগঞ্জের আবুল হাশেম ও ফুলপুরের মাহবুবুল আলম মন্ডল। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভুঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে রবিবার বিকালে এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার বলেন, ঈশ্বরগঞ্জের বাগুতা গ্রামের হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাশেম ১৯৭১ সালের বাংলা আশ্বিন মাসের ২৫ তারিখে দুপুরে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহম্মদের নির্দেশে আল বদর মোঃ হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম সহ ১৫/১৬ জন রাজাকার ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সোহাগী মাদ্রাসার হিসাব রক্ষক কাঠালিয়া গ্রামের মোঃ নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

অভিযুক্ত রাজাকাররা ঐ দিনই সোহাগী বাজার থেকে আওয়ামীলীগ সমর্থক নিরীহ ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র কর-কে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে আটক রাখে এবং পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় অমানুষিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে। এছাড়াও আল বদর মোঃ হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমসহ ১৫/১৬ জন সশস্ত্র রাজাকার তৎকালীন সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোঃ নূরুল হক ওরফে তারা মিয়াকে অপহরণ করে ময়মনসিংহ শহরস্থ বড় মসজিদ রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তাঁকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হলে তিনি পলাতক ছিলেন। রবিবার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতা নামক স্থান
থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত তাকে ঈশ্বরগঞ্জ পুলিশ গ্রেফতার করে। অপরদিককে, নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভূক্ত আসামী মাহাবুব আলম মন্ডলকে ফুলপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বাড়ি ফুলপুরের পশ্চিম রাখাই গ্রামে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গঠিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহন করে মাহাবুব আলম। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় যোগেশ চন্দ্র দাসসহ অন্যান্য সহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন সে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে এলাকায় ত্রাস কায়েম করে। হিন্দু সপ্রদায়ের লোকজনদের উপর অমানুষিক নিযার্তন করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং সম্পদ লুণ্ঠন, নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে হিন্দু সপ্রদায়সহ সাধারন মানুষের জমিজমা আত্মসাৎ করে তাদের উপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। তিনি ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির ফুলপুর সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিল। ২০১২-১৪ সালে সে ফুলপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর হিসেবে মনোনীত হয় এবং গোপনে নিজের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড অব্যহত রাখে।

গত ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা রুজুর পর থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর ঢাকা ও বিভিন্ন এলাকায় সে পলাতক ছিল। গত তিন দিন আগে ঈদ উপলক্ষে গোপনে ময়মনসিংহে এসেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার দুপুরে ফুলপুর পুলিশ তার মেয়ে ঊর্মি আক্তারের বাসা নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, সোমবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মোহাইমিনুল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম ফকির, কোতোয়ালীর ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এসকেডি/অননিউজ

আরো দেখুনঃ