দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় চার কোটি টাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পড়ে আছে। ফলে দুই বছর আগে নির্মান করা করা হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না দেশের সবচে পুরানো মহেশপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্তমান পৌর পরিষদের পূর্বে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া করে গেছেন। বর্তমান পরিষদ চলমান বিল পরিশোধের পাশাপাশি বকেয়া বিলও দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কম আয়ের পৌরসভা হওয়ায় একসঙ্গে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না। আর এই অপরাধে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের এই প্রকল্পে সংযোগ দিচ্ছেন না। ফলে নির্মান শেষ হলেও পড়ে থেকে পাল্টটি নষ্ট হতে চলেছে। অবশ্য তারা বিকল্প ব্যবস্থায় চালানো যায় কি না সেই চেষ্টা করছেন বলে জানান পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন।
স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মহেশপুর পৌর এলাকার ৯৬ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশী। দীঘদিন এ পানি পান করলে মারাত্মক রোগ ব্যাধি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পৌরসভার সাপ্লাই পানিতে অতি মাত্রায় আয়রন থাকায় পানি পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে পৌরসভার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ও আয়রন রিমুভাল প্লান্ট স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যায় করা হরেয়ছে। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন জানান, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় ঠিকাদারকে ৮০ শতাংশ কাজের বিল উত্তোলন করেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তারা পাল্টটি চালু করতে পারছেন না। ফলে সাড়ে ৩৫ হাজার পৌরবাসী আয়রন ও আর্সেনিক মুক্ত সুপেয় পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছেন। মেয়র আরো জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় ওয়েষ্ট পাওয়ার জোন ডিস্টিবিউশন কেম্পানী মহেশপুর পৌরসভার সব ধরনের নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছে। ফলে তিনটি পাম্প হাউজ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ তারা দিচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার কারনে ঠিকাদার বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারছেন না। ফলে প্লান্টটিও চালু করতে পারছে না।
এ বিষয়ে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানীর মহেশপুর অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী সেকেন্দার হাসান জাহাঙ্গীর জানান, ওয়াটার ট্রিটমেন্টপ্লান্ট ও পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য মহেশপুর পৌরসভা থেকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার নিকট ২ কোটির অধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। এতো বিপুল অংকের টাকা বকেয়া রেখে কোন ধরনের সংযোগ না দেওয়ার জন্য তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে। ফলে বিল পরিশোধ অথবা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া পৌরসভায় নতুন সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন আরো বলেন, পৌরসভার পূর্বের চেয়ারম্যান ও মেয়র কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে বকেয়া রেখে গেছেন। যা সুদ বেড়ে ২ কোটির অধিক হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারনে সোয়া ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্প চালু না হওয়ায় তার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যে কারনে তারা বিকল্প ব্যবস্তায় পরীক্ষামূলক চালুর চেষ্টা করছেন। তবে তিনি শর্ত সাপেক্ষে বিদ্যুৎ সঙযোগ দিয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করার দাবি জানিয়েছেন, তাহলে পৌরসভা এলাকার সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ আর্সেনিক ও আয়রন মুক্ত পানি পাবে। তারা পানিবাহিত স্বাস্থ্য ঝুকি মুক্ত থাকবেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24