কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলেকে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈম সরকার (১৯) দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গত বৃহস্পতিবার নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে মাদক ব্যবসা ও তরুণ অপরাধীদের দৌরাত্ম্যের চাঞ্চল্যকর চিত্রও উন্মোচিত হয়েছে।
নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম জানান, ছেলে নাঈম মদ, গাঁজা ও ইয়াবাসহ নেশাদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করছে। রাতজাগা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অনৈতিক কাজে জড়ানোকে অভ্যাসে পরিণত করেছে সে। মফিজুল বলেন, "সন্তানকে ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পরিবারের সম্মান রক্ষায় এই সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়েছি।"
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কসবা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মাদক বাঙ্গরা ও রামচন্দ্রপুর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। সরকারি নজরদারি শিথিল হওয়ার পর থেকে মাদকসেবী তরুণরা সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারী উৎপীড়ন, মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তারা।
মাদকসেবী তরুণদের একটি অংশ চুরি-ছিনতাইয়ের টাকায় আইফোন, দামি বাইক কিনে বেপরোয়া জীবনযাপন করছে। অসচ্ছল পরিবারের এসব যুবককে লক্ষাধিক টাকার বিলাসী জিনিসপত্র কিনতে দেখা গেলেও প্রশ্ন করলেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া, কেউ কেউ মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মাদক কারবারিদের তৎপরতা বাড়লেও প্রশাসনের ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারছি না। ভয়ে মুখ বুজে আছি।"
মফিজুল ইসলামের পুত্র ত্যাগের হলফনামা মুরাদনগরের মাদক সংকটের জটিলতারই প্রতিচ্ছবি। স্থানীয়দের দাবি, মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার ও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।