মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুন্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের বারুণী স্নানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। মাধবকুন্ডে প্রতিবছর চৈত্রমাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা বসে। উৎসব উপলক্ষে শনিবার (৬ এপ্রিল) ভোর থেকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছিল। হিন্দু পুণ্যার্থীর ভিড়ে গোটা জলপ্রপাত এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠেছিল। বারুণী স্নান উপলক্ষে ওই এলাকায় বসে মেলা। বারুণী স্নান উৎসব ও মেলা উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
যথাযথ ধর্মীয় উপাচার ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পুণ্যার্থীরা স্নান উৎসবে অংশ নেন। আশপাশ এলাকার পাশাপাশি অনেক দূর-দূরান্তের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই স্নানোৎসবে যোগ দেন। এখানে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, অন্য ধর্মের মানুষও ছুটে আসেন বারুণী স্নান ও মেলা দেখতে। বারুণী স্নানোৎসব উপলক্ষে মাধবকুন্ড এলাকার অদূরে বসে রকমারি পণ্যের মেলা। মেলায় উঠা জিনিসপত্র কিনতে লোকজন সেখানে ভীড় করছেন।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, পুণ্যার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে বারুণী স্নানোৎসব সম্পন্ন করতে পারেন সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের উৎসবস্থলে ও আশপাশের এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি ছিল। পর্যাপ্ত নারী পুলিশও ছিল দায়িত্বে।
মাধবকুণ্ড মাধবেশ্বর মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ জানান, শত শত বছর আগে থেকেই এখানে পূর্ণ্যস্নান হয়ে আসছে । তিনি জানান, প্রাচীন আমলে এখানে স্নান করে সন্ন্যাসী এবং বৈষ্ণবদের সেবার উদ্দেশ্যে চালদান করা হতো। এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন অসংখ্য বৈষ্ণব ও সন্ন্যাসী। পুণ্যার্থীরা গঙ্গাস্থান করে প্রাচীন নিয়মঅনুযায়ী সেই সন্ন্যাসী ও বৈষ্ণবদের চাল দান করেন আজো। পবিত্র মধু ত্রয়োদশী তিথিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বারুনী স্নান করতে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ভিড় জমেছে।
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দাস জানান, লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের এই অনুষ্ঠানকে শৃংখল রাখতে প্রায় ৩০০ ভলেন্টিয়ার কাজ করছে। লাক্ষাধিক ভক্তের জন্যই আয়োজন করা হয় মহা প্রসাদের। এই বারুনী স্নানকে সামনে রেখে মাধবকুণ্ড প্রাঙ্গনে বসেছে বিশাল মেলা। শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে স্নান করে পুণ্যার্থীরা পূজা দেন মাধবেশ্বর মন্দিরে।
আবহাওয়া ও দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার রেকর্ড সংখ্যক পূর্ণার্থী মাধবকুন্ডে বারুণী স্নানে অংশ নিয়েছেন। শোঁ শোঁ শব্দে পাথুরের চূড়া থেকে ২০০ ফুট নিচে জলধারা গড়িয়ে পড়ছে। পর্যটক ও পূণ্যার্থীরা চন্দ্রাকৃতির মতো প্রকৃতির নয়নাবিরাম দৃশ্য উপভোগ করে হৈ-হুলোড়ে মেতে উঠে কুন্ডের পানিতে নেমে পূণ্যস্নান করছেন। মাধবকুন্ডে লাখো পূণ্যার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটলেও ভলেন্টিয়ার, পর্যটন পুলিশ, বন বিভাগ ও থানা প্রশাসনের যৌথ তৎপরতায় মাধবকুন্ডে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বারুণী স্নান ও বারণী মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাধবকুন্ডে ভিড় করেছেন। সাথে পর্যটকদের হুই হুল্লোড়ে অন্যরকম এক পরিবেশ বিরাজ করছে। বাস, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত কার, আটোরিকশা, সিএনজি এমনকি ট্রাক-পিক আপে করেও পূণ্যার্থী ও পর্যটকরা এসেছেন। অনেকেই কুন্ডের পানিতে স্নান শেষে সেখান থেকে কিছু পানি সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন রোগ মুক্তির আশায়। আগতরা স্নান শেষে মাধবেশ্বর মন্দিরে নিজের মনবাসনা পূরণে পূজা দিয়ে যান। বারুনী স্নান উপলক্ষে জলপ্রপাত এলাকায় বসে বারুনী মেলা। মেলায় দেশীও তৈরির জিনিস পত্রের সমারোহে জমঝমাট হয়ে উঠে।
এফআর/অননিউজ