মামলার বাদি ও সাক্ষীকে থানায় রাতভর আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নজরুল ইসলাম শুভ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার সাবেক ওসি ও এসআই এর বিরুদ্ধে করা হেফাজতে নির্যাতনের মামলার বাদী ও সাক্ষীদের থানায় ডেকে নিয়ে রাতভর আটক রেখে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত ১৯ মে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

এদিকে, সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সোনারগাঁ থানা পুলিশ সাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে গত রোববার বিকেলে থানার এসআই ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মামলার বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর, সাক্ষী সৈয়দ মশিউর রহমান শামীম ও সাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে থানায় ডেকে নিয়ে রাতভর আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে।

সাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন জানা যায়, সোমবার (গতকাল) আমাদের মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। হাজিরার একদিন আগে ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলবেন এমন কথা বলে থানায় এনে আমাদের আটকে রাখেন। এখানে রাতে না খেয়ে ও মশার কামড় খেয়েছি। আমি একজন ডায়বেটিকের রোগী। আমার জীবনে এমন ঘটনা বিরল সাক্ষী ও বাদীকে আটক রেখে রাতভর মাসনিক নির্যাতন চালানো হয়।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার এসআই ইমরান হোসেন বলেন,বিগত দিনে তারা সাক্ষী না দেওয়ায় মাননীয় আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাজেদুল ইসলাম স¤্রাট বলেন, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত মে মাসের ১৯ তারিখ বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তারপরও থানা পুলিশ সাক্ষীদের গ্রেফতার করে রাতভর আটক রেখে যে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করেছে তা শুধু আইন পরিপন্থী নয়, তা একটি অপরাধ। বাদী ও সাক্ষীগন এই বিষয় নিয়ে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বা পুরো বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবে। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন মিয়া বলেন, বাদী ও সাক্ষীদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে একথা সত্য। তবে তাদের হাজত খানায় রাখা হয়নি। শিশু ও নারী সেবা ডেস্ক কক্ষে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ পৌরসভার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ এ সোনারগাঁ থানার তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহন করে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানে ঘটনা প্রমান হলে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই মামলায় গতকাল ৩ জুন আদালতে স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ ছিল। গত তারিখে এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বাবুল বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

একে/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ