মুনাফিকের সংজ্ঞা প্রকারভেদ ও পরিণতি

নিজস্ব প্রতিবেদন।।

সুরা আন-নিসা,১৪৪. হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও?

সুরা আন-নিসা,১৪৫. নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তাদের জন্য তুমি কখনো কোনো সহায় পাবে না। ১৪৬. কিন্তু যারা তাওবা করে, নিজেদের সংশোধন করে, আল্লাহর পথকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর উদ্দেশেই দ্বীনে (ধর্মে) একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে। আর মুমিনদেরকে আল্লাহ অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।

সুরা আন-নিসা,১৪৭. তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো ও ইমান আনো, তবে তোমাদের শাস্তিতে আল্লাহর কী কাজ? আল্লাহ পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।-

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের স্বার্থবিরোধী কাজ করতে মুমিনদের নিষেধ করেছেন। যেমন- কাফিরদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানানো, তাদের পক্ষে লাভজনক কাজ করা, মুমিনদের গোপন খবরাখবর তাদের জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। অতঃপর তিনি মুনাফিকদের পরিণতি ও ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তাদের সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মুনাফিক কাকে বলে

‘মুনাফিক’ শব্দটি ‘নিফাক’ শব্দমূল থেকে এসেছে, যার অর্থ কোনো কিছুকে গোপন রেখে এর বিপরীত কথা বা কাজ প্রকাশ করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে অন্তরে কুফরি ও ইসলামবিরোধিতা রেখে মুখে ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে এবং মুসলমান হওয়ার দাবি করে। এরা কেন এ কাজ করে, এর ব্যাখ্যায় কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।’- সুরা বাকারা, আয়াত : ৯। অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা মূলত কাফিরদের কাছ থেকে মান-মর্যাদা পেতে চায়।’ (ভাবার্থ)- সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৩৯।

ইসলামের ইতিহাসে মুনাফিকের সরদার হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল। মুনাফিকদের অন্যতম নিকৃষ্ট কাজ হলো মুমিনদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয়, আর যারা নিজ অর্জিত শ্রম ছাড়া আর কিছুই (দান করতে) পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহও তাদের নিয়ে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’- সুরা তাওবা : ৭৯।

মুনাফিকের প্রকারভেদ

নিফাক ও মুনাফিকি দুই ধরনের- এক. বিশ্বাসগত মুনাফিকি, দুই. কর্মগত মুনাফিকি। বিশ্বাসগত মুনাফিকি হলো, অন্তরে কুফরি রেখে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করা। এ ধরনের মুনাফিকির মাধ্যমে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। আর কর্মগত মুনাফি যেমন- আমানতের খিয়ানত করা, মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, গালিগালাজ করা ইত্যাদি। এসব কর্ম মুনাফিকি হলেও এসবের মাধ্যমে কেউ ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যায় না।

মুনাফিকের শাস্তি ও পরিণতি

সুরা আন-নিসার ১৪৫তম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ‘মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্ব নিম্নস্তরে অবস্থান করবে।’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘মুনাফিকরা অগ্নিগর্ভ সিন্দুকে থাকবে।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তাদের ঊর্ধ্বে ও নিম্নে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’ (তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে) আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উপরোক্ত আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দিন আমিন। লেখকঃ- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সাবেকঃ- ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

আয়েশা আক্তার/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ