কুমিল্লার মুরাদনগরে চলছে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার মহোউৎসব। এতে যেন ফসল ফলানোর স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেছে কৃষকের। কৃষি জমিতে ড্রেজার স্থাপনের ফলে এ উপজেলায় কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। কয়েকদিন পরপর ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করলেও এতে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না ভোক্তভুগী কৃষকরা। ভ্রাম্যমান আদালতে ড্রেজার মেশিন জব্দের পর এসব ব্যবসায়ীরা কয়েকদিন না যেতেই আবার নতুন মেশিন এনে মাটি কাটা আরম্ভ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় শতাদিক ড্রেজার দিয়ে কৃষিজমি থেকে প্রতিদিন কাটা হচ্ছে। ফসলি জমি এবং সরকারী খাল-বিল বাদ পরেনি এ মাটি কাটা থেকে। প্রভাবশালী উপর মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় একটি মহল ড্রেজারের মাধ্যমে এসব মাটি ক্রয় বিক্রয় করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীদের একটাই কথা, আমরা মাটি কেটে তো দেশ থেকে পাচার করছি না মানুষের সুবিধার্থে এক জায়গা থেকে কেটে অন্য জায়গায় নিয়ে এসব মাটি ভড়াট করছি।
স্থানীয়রা জানান, ড্রেজারের কারনে উপজেলার ফসলি জমির ব্যপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত হুমকি দমকি দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনছেন ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। আবার কোন কোন কৃষককে জমি বিক্রি করতে বাধ্য রেছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
প্রথমত এসব ব্যবসায়ীরা কয়েক বিঘা জমি কিনে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে পরে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তেলন করার কারনে খননকৃত জায়গাটি গভীর হওয়ার পর আশেপাশের জমিগুলোর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এতে করে জমির মালিকদের বেকায়দায় ফেলে পাশের জমি ক্রয় করতে বেপরোয়া হয় এসব ব্যবসায়ীরা। তখন জমির মালিকগন বাধ্য হয়ে জমি বিক্রয় করে এসব ব্যবসায়ীদের কাছে। কেউ জমি বিক্রয় করতে অস্বীকার করলে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি-দমকি ও মিথ্যা বানোয়াট মামলা হামলার ভয় দেখানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা, কাজিয়াতল, বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা, কালারাইয়া, দীঘিরপাড়, বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রাম, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের ব্রাহ্মন-চাপিতলা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া, যাত্রাপুর, রঘুরামপুর, ভবানীপুর, টনকি ইউনিয়নের টনকি, বাইড়া, চাপিতলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, চাপিতলা, পুস্করিনীর পাড়, ধামঘর ইউনিয়নের আড়ালিয়া, ধামঘর, পরমতলা, মুগসাইর,বাখরনগড়, টনকি, এলখাল, কোম্পানীগঞ্জ ছালিয়াকান্দি ইউনিয়ন ও জাহাপুর ইউনিয়নসহ এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কাটছেন রানিমুহুরি গ্রামে ইমন মিয়া, শাহজুদ্দি মেম্বার, টনকি গ্রামের আনিসুর রহমান তানিম, সাইফুল ইসলাম, সোনারামপুর গ্রামের বাতেন মিয়া, সোনাকান্দায় আমির হোসেন, পেন্নাই গ্রামের আনোয়ার হোসেন,ধামঘর গ্রামের ইব্রাহিম, কাজিয়াতল গ্রামের মোস্তফা, ছালিয়াকান্দি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মোচাগাড়া গ্রামের আক্তার হোসেন, মাহুতিকান্দা গ্রামের জামাল উদ্দিন, কামাল্লা গ্রামের মাসুম সরকার, খাপুরা গ্রামের মোশারফ হোসন, বাখরাবাদ গ্রামের আক্তার হোসেন সহ শতাধিক ব্যবসায়ী একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটছেন।
অনন্তপুর গ্রামের কৃষক মাহবুব বলেন, ড্রেজারের কারনে আমাদের ফসলি জমির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রেজার স্থাপন করায় এর গভির গর্তে আমাদের জমিও বিলিন হয়ে যাচ্ছে। একবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করায় ভ্রাম্যমান আদালতে সেই ড্রেজার জব্দ করেছিলেন কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর সে জায়গায় আবার ড্রেজার স্থাপন করেন খাপুরা গ্রামের মোশারফ হোসেন। এভাবে চলতে থাকলে এসব ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছে জমি বিক্রি করে দিতে হবে। আর জমি বিক্রি না করলে জমি ভেঙ্গে ড্রেজার গর্তে বিলিন হবে। বড়িয়াচর গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার পাশের জমিতে ড্রেজার স্থাপন করেছেন পেন্নাই গ্রামের আনোয়ার হোসেন এতে করে আমাদের জমির উর্বরতা নস্ট হচ্ছে। পাশাপাশি জমি হওয়ার কারনে যেকোন সময় আমার জমি ভাঙ্গনের কবলে পরবে। আমরা প্রশাসনের নিকট এর প্রাতিকার চাই। অভিযোগকারী কৃষকরা প্রতিবেদকের কাছে তাদের দুরবস্থার কথা জানালেও অধিকাংশ কৃষকরা এসব প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ীর ভয়ে মুখ খুলছে না।
মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেন, ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ড্রেজারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
জেনি/অননিউজটুয়েন্টিফোর