কুমিল্লার মুরাদনগরে গোমতী নদীর উপর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু নির্মাণ কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আপত্তিতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এর ফলে দুটি সেতুসহ ১২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৭৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পাউবোর মধ্যে সেতুর উচ্চতা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজটি ঝুলে আছে।
পাউবো দাবি করছে, বর্তমান সেতুর অবস্থান থেকে অন্তত ২০ ফুট উঁচু করে নতুন সেতুটি নির্মাণ করতে হবে। অন্যদিকে, সওজ বিভাগ বলছে, গোমতী নদীর অন্যান্য এলাকায় স্থাপিত সেতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বর্তমান সেতু থেকে মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করলেই চলবে। দুই সরকারি সংস্থার মধ্যে এই মতবিরোধের জেরে দীর্ঘদিনেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মনগড়া মন্তব্যের ফলে তৃতীয় প্যাকেজটির দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হচ্ছে না।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবির ২০ ফুট উচ্চতা নিয়ে সওজ-পাউবো দ্বন্দ্ব ৭৫ কোটি টাকা ফেরতের শঙ্কা এলাকাবাসীর আনন্দ এখন হতাশা পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বরাদ্দ হলেও বর্তমানে এই স্থানে স্থাপিত ১৯৮৮ সালের নড়বড়ে বেইলী সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেইলী সেতুটির কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে, যা যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব এবং সড়ক উন্নয়নে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ৩৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাঁক সরলীকরণসহ ৮টি বেইলি ব্রিজের বদলে ৫টি নতুন আরসিসি গার্ডার সেতু এবং ৩টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণের কথা ছিল।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট তিনটি প্যাকেজ করা হলেও, পাউবোর গাফিলতি ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তৃতীয় প্যাকেজের কাজটি থমকে আছে। এরইমধ্যে অন্য দুটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। সেতু নির্মাণে সৃষ্ট এই জটিলতার কারণে এলাকাবাসীর আনন্দ এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে সেতুসহ রাস্তার কাজ দ্রুত শুরু করার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, মুরাদনগরে গোমতী নদীর উপরে একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা সময়ের দাবি এবং জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সেতুটি যে পরিমান উচ্চতা চাচ্ছে, সে পরিমাণ উচ্চতায় আমরা ডিজাইন করতে পারছি না। যার ফলে তৃতীয় প্যাকেজটির দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বিষয়টির ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, আমি এক বছর ধরে এখানে আছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।