মুরাদনগরে নারী উদ্যোক্তাদের আবির্ভাবে সম্ভাবনার নতুন পথ
আজিজুল হক, মুরাদনগর।।
সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুসারে পুরুষরা টাকা রোজগার করবে, নারীদের করতে হবে গৃহস্থালির কাজ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগামী মূল্যের সময়ে একজনের আয়ে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হচ্ছে ঘরের কর্তাদের। নারীদের কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধিতে, বেকারত্ব সমস্যার অবসানের পাশাপাশি নিজের হাতখরচ নিজেই উপার্জন করে অবদান রাখছে পরিবারে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন সব চমকপ্রদ কর্মক্ষেত্র। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আলোচনা করছি সম্ভ্রান্ত পরিবারের আদর্শ নারীদের বেকিং আইটেমের কাজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পকথা।
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী উদ্যোক্তাদের বেকিং আইটেমের উপর অভূতপূর্ব সাফল্য প্রতিনিয়ত নজর কাড়ছে সকলের। তাদের আগ্রহীচেতা মনোভাবে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার শক্তি ও সাহস পাচ্ছে বিভিন্ন স্থানের মানুষজন। অল্পসময়ের মাঝেই গড়ে উঠেছে অনলাইন ভিত্তিক বেশ কিছু বেকিং শপের পথ চলা। উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলা যায়, কেকের সমাহার, সামিরা বেকিং, বেকিং শপ বিডি, আফরিনা বেকিং, কেক কর্ণার প্রভৃতি। সবগুলো বেকিং শপই পরিচালনা করছেন উঠতি বয়সের নারী উদ্যোক্তারা। শুরুটা মোটেও সরলতায় পূর্ণ ছিলোনা তাদের জন্য। সমাজের দৃষ্টিকটু পিছুটানকে দুমড়েমুচড়ে চলেছেন তারা সাফল্যের পথে। বর্তমানে এলাকাজুড়ে তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যসব মানুষ থেকে অত্যাধিক।
কেকের সমাহারের নারী উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার খোলা কাগজকে বলেন, বাবার কাছ থেকে হাতখরচ নিয়ে চলতাম। মজার ছলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু করলাম বেকিং আইটেমের কাজ। সহপাঠীদের সহযোগিতায় আমি অনেক সাহস পেয়েছি। দেখলাম মানুষজন ভালোই সাড়া দিচ্ছে, আর পিছুফিরে তাকানো নয়। এখন আগের মতো সবকিছুতে বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়না। নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিজের উপার্জনের টাকায় ক্রয় করতে পেরে মনে আনন্দই লাগে।
মুরাদনগরের প্রথম বেকিং বিষয়ক নারী উদ্যোক্তা সামিরা মাহমুদ(বৃষ্টি) খোলা কাগজকে বলেন, মুরাদনগরে বেকিং আইটেমের কাজ আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম, শুরুর দিকে মানুষজন বিভিন্ন কটূকথা বলতো, পিছুটান দিয়ে হতাশাগ্রস্তের চেষ্টা করতো। ভয় দেখাতো আমি নাকি এগিয়ে যেতে পারবোনা। কিছু কাছের মানুষ ভরসা দিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছে তাদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতা। এলাকার মানুষ আমাকে আমার ডাক নামের থেকে বেকিং আইডির নামে অধিক চিনে যা সত্যিই গর্বের। আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ আমার থেকে কেক নিতে আসতো। অন্যান্য নারীদের কথা বিবেচনা করে আমি তাদেরকেও শিখিয়েছি কেক বানানো।
নারী উদ্যোক্তা আফরোজা বিথী ও সুমাইয়া আফরিন খোলা কাগজকে বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। আমার পরিবার আমাকে ভরসা দিয়েছে সবসময়। ক্রেতাদের ভালোবাসায় উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মেলাতেও স্টল রাখা হয় আমাদের জন্য। নারীদেরকে চাকুরীর পেছনে না ছুটে নিজের অবস্থান থেকে কিছু করা শিখতে হবে। দিনশেষে নিজের হাতখরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করা যায়।
স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, মানুষ চাকুরীর পেছনে ছুটছে। তাদের উচিত নিজের চাকুরীর ব্যবস্থা নিজেরই করা। সকলেই কোম্পানি অথবা, সরকারী চাকুরী করবে এমনটা নয়। উদ্যোক্তা হলে দেশের বেকারত্ব সমস্যা কমে আসবে। আমাদের অনেক উঠতি শিক্ষার্থী বেকিং আইটেমের কাজ শুরু করছে, আমাদের উচিত অনুপ্রেরণা দেওয়া। কারণ ঘরে বসেই তারা কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারছে। এই ধরনের ব্যবসায় নারীদের ঘরের বাহিরে গিয়ে সর্বসম্মুখে কর্মপরিচালনা করতে হয় না। সামন্য পরিমানে নারীদের উপার্জিত এই অর্থ পরিবারে কিছুটা হলেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।