কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর বাজারে ছুরি আঘাতে রাজিব (২৪) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ৩ জন। নিহত রাজিব রহিমপুর গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে। আহতরা হলো,নবীপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর আহমেদ (৬০), তার ছেলে আক্তার হোসেন (৩০) ও ছোট ভাই জসিম উদ্দিন (৫৫) ।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় ৮টায় পাওনা টাকা নিয়ে সালিশী বৈঠক চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘাতক মারুফ (২০) মোচাগড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। দুর্দান্ত এই কিলারকে চট্রগ্রাম থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীপুর গ্রামের আক্তারের স্ত্রী রাবেয়ার (৩৬) সাথে একই এলাকার ফারুকের স্ত্রী শিরিন (৩৪) নামে এক মহিলার দশ হাজার টাকার লেনদেন নিয়ে কিছুদিন পূর্বে ঝগড়া ও মারামারি হয়। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর স্থানীয় মেম্বার মাইন উদ্দিন ও কামাল মাস্টারসহ সালিশী ব্যাক্তিবর্গ নবীপুর স্টেশনে একটি অফিসে বসেন। সালিশ চলাকালীন অবস্থায় দুজন অপরিচিত যুবক এসে বলেন কিসের বিচার ? তাকে (রাবেয়াকে) ধর! এই বলে ভিতরে ডুকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সকলের সামনে রাবেয়াকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন রাজিব মহিলাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিবের বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করেন ঘাতক। মুহুর্তের মধ্যেই আক্তার , মোজাম্মেল, ও জসিমকে কুপিয়ে গুরুতর যখম করে। বেপরোয়া ছুরিচালনা দেখে স্থানীয় সাহসী যুবক আলমগীর হোসেন তাকে পেছন থেকে ছুরিসহ জড়িয়ে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। ঘাতক পেশাদার কিলার গ্রুপের সদস্য হতে পারে ধারনা করছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী রাবেয়া আক্তার বলেন, টাকা নিয়ে দ্ব›েদ্বর জেরে কিছুদিন পুর্বে পাশের বাড়ির শিরিনের সাথে হাতাহাতি হয়। ওটার বিচারের জন্য নবীপুর স্টেশনে একটি অফিসে আসি। সেখানে প্রতিপক্ষ শিরিন আগে থেকে তার দেবরকে দিয়ে ভাড়াটে পোলাপাইন রাখে। বিচারচলাকালীন সময় ভাড়াটে খুনি আচমকা ভেতরে ডুকে আক্রমন করে। রাজিব আমাকে বাঁচাতে গেলে খুনি তার কোমর থেকে ছুরি বের করে রাজিবের বুকে ও পেটে আঘাত করে। রাজিব শুধু একটা চিৎকার দেয় 'আপা আমার কলিজাটা ছিড়ে গেছে।'
নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন জানান, আমার ভাই ফার্নিচারের নকশার কাজ করত। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর তার বন্ধুর সাথে সালিশী দেখতে যায়। সেখানে ঘাতকের হাত থেকে মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে ভাড়াটে খুনির হাতে নির্মমভাবে খুন হয়। সে বিয়ে করেছে ৩ বছর হয়। দুই বছরের একটি শিশু পুত্র আছে। আমরা এই হত্যারীসহ জড়িতদের ফাঁসি চাই।
সালিশী কামাল মাস্টার বলেন, বিচার প্রায় শেষ এমতাবস্থায় দুটি অপরিচিত ছেলে ভীতরে ঢুকে । ধর বলে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেই আচমকা আক্রমন করে। প্রথমে মনে হয়েছে কিল ঘুষি দিচ্ছে। তাৎক্ষনিক রক্তপাত দেখে লক্ষ করা গেছে ওর হাতে চকচকে ধারালো অস্ত্র। কিলার ভাড়াটে ও দুর্দান্ত। তাকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল হক বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান আসামীকে আটক করা হয়েছে। সে একাই ছুরিকাঘাত করেছে। এতে আরো ৩ জন আহত হয়েছে । এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন।